বায়ুদূষণ

রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যে সব তথ্য উঠে আসে, তা উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, দেশে ইট পোড়ানোর ভরা মৌসুম চলছে। অন্যদিকে, সারাদেশে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। যেখানে ৪ হাজারই অবৈধ। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে এক হাজারেরও বেশি দূষণকারী ইটভাটা। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। আমরা বলতে চাই, শুধু ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য যদি ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী হয়- তবে বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। তথ্য মতে, ইটভাটার ধোঁয়ায় গত ১৫ বছরে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে ৯০ শতাংশ। রাজধানীর বায়ুদূষণ বন্ধে দুই দফায় বিশ্বব্যাংক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তারপরও রাজধানীর বায়ুদূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। অথচ এটাও আমলে নেওয়া দরকার, দূষণে জিডিপির পাঁচ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু কমছে ৭ বছর। বায়ুদূষণে মানুষ নানা ধরনের রোগে ভুগছে। এ জন্য অবৈধ ও দূষণকারী ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে এটাও সামনে এসেছে। খুব শিগগিরই ঢাকার আশপাশে অভিযান শুরু হবে বলেও জানা যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের পরিচালক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় ৪শ' অবৈধ ও দূষণকারী ইটভাটা বন্ধ ও জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ ও দূষণকারী ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলোতে অভিযান চলবে। বলা দরকার, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। দেশের বেশিরভাগ ইটভাটা নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলছে। এসব ইটভাটার কারণে ঘটছে বায়ুদূষণ। আর ইটভাটাগুলোয় প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন কাঠ পোড়ানো হয়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। এ ছাড়া নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলাবালির মাধ্যমে ১৩ শতাংশ, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিকসামগ্রী পোড়ানোর ফলে ৫ শতাংশ এবং প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ২৪ শতাংশ আসছে ঢাকায়। আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন সময়ে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য এসেছে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। মনে রাখা দরকার, বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। তাদের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ফলে এই দিকটিও আমলে নিতে হবে। এর আগেও এটা আলোচনায় এসেছে যে, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে নানা সময়ে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণমুক্ত করতে যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি। পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা যায়, ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড একটি অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস। অনবায়নযোগ্য জ্বালানি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বনায়ন ধ্বংসের ফলে বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই পার্শ্ববর্তী নদী বা জলাশয়ে নিষ্কাশিত হয়। ওই বর্জ্য পানিতে মিশে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান যেমন- লেড, ক্যাডমিয়াম, জিংক ও ক্রোমিয়াম জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়ায় মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিল রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। সর্বোপরি বলতে চাই, বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি এমনটিও জানা গিয়েছিল। ফলে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী- এটাকে সামনে রেখে সার্বিকভাবে বায়ুদূষণের প্রত্যেকটি কারণ বিবেচনায় নিয়ে বায়ুদূষণ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।