বিপুল সম্ভাবনার বাংলাদেশ

অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ এখন অমিত সম্ভাবনাময় একটি দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেও পরিগণিত। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। স্বদেশ থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের এ দেশে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিক দেশ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে রয়েছে বিনিয়োগের বিপুল ক্ষেত্র। আমাদের রয়েছেন বিপুল সামুদ্রিক সম্পদ। আবার জনসংখ্যা সমৃদ্ধ দেশ হওয়ায় শ্রমের দিকেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে উন্নয়নের সিঁড়িতে চলমান থাকায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশই এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বিনিয়োগেও আগ্রহী। সব কিছু মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে এগিয়ে রাখছেন। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এরই ধারাবাহিকতায় এবার যুক্তরাজ্য ও ইতালি বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনার কথা পুনর্ব্যক্ত করল। ব্রিটেনের ফরেন ও কমনওয়েলথ অফিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের মিনিস্টার অব স্টেট মার্ক ফিল্ড এবং ইতালির নতুন রাষ্ট্রদূত এনরিকো নানজিয়াটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক দুটি বৈঠকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাসহ উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের কথা বলেছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি মার্ক ফিল্ড জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি শিক্ষা খাতে তাদের আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন। বলাইবাহুল্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্য ও সে দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিল বাংলাদেশ। তখন থেকেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে বলেও উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে ইতালির নতুন রাষ্ট্রদূত এনরিকো নানজিয়াটা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে বলেন, 'উনি হচ্ছেন বিশ্বের বহু দেশের অনুপ্রেরণার উৎস।' এ ছাড়া বাংলাদেশের 'অনেক সম্ভাবনা আছে' উলেস্নখ করে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে উভয় দেশের চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের মার্ক ফিল্ড এবং ইতালির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইসু্য, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা, চামড়া খাত, শিল্প-বাণিজ্য-বিনিয়োগ, গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রসহ নানান বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। স্মর্তব্য যে, বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা একটি বড় চাপ। বিষয়টি উলেস্নখ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়ানো যৌক্তিক বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য নিজের সংগ্রামের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বেসরকারি খাতকে সম্প্রসারণ করেছে এবং বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলেও বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা মনে করি, বিদেশিদের এই আগ্রহকে কাজে লাগানো দরকার দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে। বিনিয়োগের জন্য সক্ষমতা বাড়িয়ে শুধু বিদেশি নয়, দেশীয় বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরের সম্পদের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর হলেও বাংলাদেশ এখন আর 'তলাবিহীন ঝুড়ি নয়'। অনেক আগেই আমরা এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছি। এখন নজর দিতে হবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আগ্রহের দিকে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি বৈষম্য বিলোপেরও উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কন্নোয়ন ঘটানো গেলে, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে- বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে সরকারের এমন পরিকল্পনা গ্রহণই সমীচীন, যাতে দেশের উন্নয়ন গতিপ্রাপ্ত হয়। ইতোমধ্যে যেসব দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সহযোগিতার আগ্রহ দেখিয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে। আর যুক্তরাজ্য কিংবা ইতালি নয়, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশকেও বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা যায় কিনা, সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা ভাবতে পারেন। বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এটাই সবার প্রত্যাশা।