রিজার্ভ কমেছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আবারো রিজার্ভ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) কমেছে। মূলত এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে ১২৯ কোটি ডলার আমদানি দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ কমেছে। সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলার। ৬ মার্চ বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার ও মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৩৩ কোটি ডলার। এর পরদিন আকুর মাধ্যমে ১২৯ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। এরপর বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ কমে হয় ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলার। অন্যদিকে, মোট রিজার্ভ কমে হয় ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। গত বৃহস্পতিবার আকুর মাধ্যমে বিল পরিশোধের পরের তিন দিন দেশে ও বিদেশে সপ্তাহান্তের ছুটি ছিল। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন তথা আকু হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এদিকে গত ২০ ফেব্রম্নয়ারি থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলার-টাকা অদলবদল বা সোয়াপ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের পতনের ধারা শ্লথ হয়েছে। নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার ও টাকার অদলবদল করতে পারছে। সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমরা মনে করি, রিজার্ভ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এর আগে যেমন রিজার্ভ কমার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বাড়ছে উদ্বেগ- এমন বিষয়ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছিল। ফলে রিজার্ভ কমার বিষয়টিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামায় ছিল। তবে করোনাপরবর্তী সময়ে বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে আসে। এতে অনেক দেশ বিদেশি ঋণ কমালেও বাংলাদেশে বেড়ে যায়। এ কারণে আগের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়া এটাও আমলে নেওয়া দরকার, একদিকে যেমন করোনাপরবর্তী সময়ে ঋণ বেড়ে যায়, তেমনি দেশের মধ্যে তীব্র ডলার সংকটে খোলাবাজার পরিস্থিতি ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে সংকট আরও জটিল হয়। বাধাগ্রস্ত হয় এলসি খোলা। এ ছাড়াও বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ করে জরুরি পণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে প্রতি মাসে বাজারে ডলার চলে যাওয়ায় কমেছে রিজার্ভের পরিমাণ। লক্ষণীয়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে পণ্য আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫৭২ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের। একই সময় দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলার মূল্যের। এতে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৪৭৬ কোটি ডলার। রিজার্ভ কমছে এই বিষয়টিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। রিজার্ভ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং অর্থনীতিবিদরা যে বিষয়গুলো বলছেন, সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।