আবারো অস্থির শিক্ষাঙ্গন

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতির ধারায় দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ ক্ষেত্রে যথাযথ শিক্ষার বিস্তার ঘটানো ও শিক্ষা অর্জনের পরিবেশও সঠিক হওয়া অপরিহার্য। সঙ্গত কারণেই আমরা বলতে চাই, যদি দেশের শিক্ষাঙ্গন অস্থির হয় তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকেই সামনে আনে- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের শিক্ষাঙ্গন আবারও অশান্ত ও অস্থির হয়ে উঠেছে। অব্যাহত ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি, যত দ্রম্নত সম্ভব এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। তথ্য মতে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে প্রাপ্তির দাবির বিষয় যেমন সামনে এসেছে, তেমনি আন্দোলনের ১৪তম দিন গত সোমবার সকাল ১০টায় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় প্রধান ফটক আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। টানা দুই সপ্তাহ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যত অচলাবস্থা চলছে। এ ছাড়া চার দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রোববার পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের পর ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ ছিল শাটল ট্রেন চলাচল। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ উঠেছে খোদ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন ও তদন্তের নামে টালবাহানার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরি থেকে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ইসলামী শিক্ষার্থীরা। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ ১১ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সরকারি ব্রজমোহন কলেজে পরিবহন সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত বলতে চাই, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। ফলে সংশ্লিষ্টদের এটা ভেবে দেখা দরকার, একটি দেশের শিক্ষাঙ্গন যদি এভাবে অস্থির হয়ে ওঠে তবে তার প্রভাব কতটা নেতিবাচক হতে পারে। বলা দরকার, যে কোনো কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি অস্থিরতা কিংবা নিশ্চল অবস্থার সৃষ্টি হয়, তবে তার খেসারত দিতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই। আর এটাও মনে রাখা সমীচীন; এই ক্ষতি পূরণ করা সহজ বিষয় নয়। কেননা, একদিকে যেমন সেশনজট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়, অন্যদিকে শিক্ষা অর্জনের স্বাভাবিকতাও নষ্ট হয়। ফলে শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। লক্ষণীয় যে, এর আগেও বিভিন্ন সময়েই বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হয়েছে, নানা বিষয় নিয়ে মতবিরোধ, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-সহিংসতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ ধরনের পরিস্থিতি কোনোভাবেই ইতিবাচক হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, তা আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সংকট নিরসন করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শিক্ষাঙ্গন কেন অস্থির হয়ে উঠেছে- তার নেপথ্যের কারণ ও সামগ্রিক ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দ্রম্নত সংকট নিরসনে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। একটি দেশের শিক্ষাঙ্গনে যদি এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে। আমরা মনে করি, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্রম্নত এই পরিস্থিতি নিরসন করা জরুরি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা ও সংঘর্ষ পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সেই দিকেও মনোযোগী হতে হবে। দেশের শিক্ষাঙ্গন অস্থির যেন না হয় এবং সুশিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এমনটি কাম্য।