ফায়ারম্যান সোহেল রানার মৃতু্য

তার আত্মত্যাগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পৃথিবীতে কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যকে বাঁচান, মানুষের কল্যাণে সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তারা নমস্য এবং মানুষের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের কথা বলে, তারা উদাহরণ হয়ে থাকে সমাজে, রাষ্ট্রে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। প্রশ্ন হচ্ছে- মৃতু্যতে তুচ্ছজ্ঞান করে অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা এটা ক'জন পারে। পেরেছেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, পুড়তে থাকা এফ আর টাওয়ারে আটকা পড়া মানুষের জীবন বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানাকে বাঁচানো গেল না। সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে রানার মৃতু্য হয়। এর মধ্য দিয়ে এফআর টাওয়ার অগ্নিকান্ডে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে ২৭ জনে দাঁড়ালো। উলেস্নখ্য, কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা গ্রামে। পরিবারের বড় ছেলে রানা ২০১৫ সালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন। গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন রানা। ২৩ তলা ওই ভবনে আটকা পড়া মানুষের ল্যাডারের মাধ্যমে নামাচ্ছিলেন তিনি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন জানান, বাস্কেট বেশি উঠে যাওয়ায় একটি ফ্লোরে আটকা পড়া মানুষকে নামাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন সোহেল রানা। তিনি তখন মই বেয়ে নামতে যান। কিন্তু ওই অবস্থায়ই মই চলতে শুরু করলে রানার ডান পা আটকে গিয়ে কয়েক জায়গায় ভেঙে যায়। সেফটি বেল্টের চাপে পেটের একটা অংশও থেঁতলে যায়। এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর কী হতে পারে। বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের সময় উদ্ধার কাজে গিয়ে আহত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহেল রানার মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সোমবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, 'ফায়ারম্যান সোহেল রানা মানবসেবায় আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সবার জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি বলেছেন, অন্যের জীবন রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে সোহেল রানা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের সঙ্গে আমরা সহমত প্রকাশ করছি। কারণ ফায়ারম্যান সোহেল রানার মতো এই ধরনের সাহসী ও ত্যাগী মানুষ সমাজে বিরল। সমাজে আত্মকেন্দ্রিক মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। অন্যের ভালো-মন্দ দেখার তাদের সময় নেই। ফলে সমাজ এত অসহিষ্ণু ও অপরাধপ্রবণ। সামাজিক অবক্ষয় এত তীব্র। মানুষের নিষ্ঠুরতা অমানবিকতার চিত্রই বেশি চোখে পড়ে। এটা সত্য অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা, অন্যের উপকারে আসার, অন্যের জীবন বাঁচানো সমাজে সত্যিই বিরল। নিজের জীবন দিয়ে এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। আমরা মনে করি তার পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সহযোগিতা করা উচিত। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারকে জানাই গভীর সমবেদনা।