দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন ছাড়া বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনও সম্ভব নয়। তাই সর্বদা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে।

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

মো. খসরু চৌধুরী
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে- যার নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে 'ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।' এ দেশের স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর জন্মই হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু আমাদের অনুভূতি ও অন্তরাত্মায় মিশে আছেন। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। শেখ মুজিব মানেই বাংলার মুক্ত আকাশ। শেখ মুজিব মানেই বাঙালি জাতির অস্তিত্ব। শেখ মুজিব মানেই বাঙালি জাতির আশ্রয়-ভরসা। শেখ মুজিব মানেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে। প্রায় দুই যুগ ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেন। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রম্নর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ও বঙ্গবন্ধুকে মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার। দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের, স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার জাতীয় নেতাকে। স্বাধীনতার প্রথম লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খলমুক্তি। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তা অর্জিত হয়েছে। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন; যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে। পাকিস্তানিরা এ দেশটাকে শুধু শোষণই করেছে, বাঙালির কোনো অধিকারের স্বীকৃতি ছিল না। তাদের অব্যাহত শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সত্তরের নির্বাচনে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালির হাতে ক্ষমতা না দিয়ে শুরু করেছিল বাঙালিনিধন। সেই গণহত্যায় দলগতভাবে অংশ নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। গড়ে তুলেছিল রাজাকার, আলবদরের মতো বিভিন্ন বাহিনী। মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামের নেতাকর্মীরাও পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় নামে। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা তারা দমাতে পারেনি। জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অগণিত শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে জাতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের যেসব স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ রয়েছে সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী সব অপশক্তিকে নির্মূল করার ব্যাপারেও। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে- এমনটাই প্রত্যাশা সবার। বাঙালি জাতির হাজার বছরের অর্জন মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে আমাদের সংবিধান। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে শাসনতন্ত্রে প্রতিফলনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন সংবিধানে অটল থাকা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন ছাড়া বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনও সম্ভব নয়। তাই সর্বদা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে। শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নসহ আর্থসামাজিক সব খাতে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিস্ময়কর অগ্রগতি। আর্থসামাজিক সব সূচকে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের 'বিস্ময়' হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন ও বর্তমান মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাস বাংলাদেশকে উন্নয়নের 'রোল মডেল' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবারো নিরঙ্কুশভাবে জয় পায় এবং পঞ্চমবারের মতো রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করে। বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নত দেশের রুটে তুলে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত-দিন পরিশ্রম করে চলেছেন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মানবতার বিশ্বজননী হিসেবে ইতোমধ্যেই তার ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরিশেষে বলছি, শেখ হাসিনা আছেন বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছেন। প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। মো. খসরু চৌধুরী : সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ