প্রবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় দেশ

পরামর্শগুলো আমলে নেয়া জরুরি

প্রকাশ | ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের জন্য একটি সুখবর। বিশ্বের দ্রম্নত বর্ধনশীল অর্থনীতির পাঁচটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এর আগে নানানভাবেই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চলতি বছর দাঁড়াবে সাত দশমিক তিন শতাংশ। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক জানিয়েছিল, চলতি বছর আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেল, বিশ্বের দ্রম্নত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত আশা জাগানিয়া বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দ্রম্নত প্রবৃদ্ধির তালিকায় পাঁচটি দেশের শীর্ষে রয়েছে রুয়ান্ডা। দেশটির প্রবৃদ্ধি সাত দশমিক আট হতে পারে এমন তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি- জিডিপির হার সাত দশমিক তিন শতাংশের বেশি হবে না। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রবৃদ্ধিও বাংলাদেশের মতো বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির অগ্রগতির সুসংবাদ দিলেও মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন নিয়ে সরকার এবং এশীয় উন্নয়ন সংস্থা-এডিবির সঙ্গে ভিন্নমত রয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি আট দশমিক এক তিন হবে বলে সরকারি পক্ষ মনে করছে। অন্যদিকে এডিবিও জানিয়েছে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিষয়ে। এতে প্রবৃদ্ধির অগ্রগতির বিষয়টিও খানিকটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে খেলাপি ঋণের মতো ছোঁয়াচে রোগ দূর করার পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের যে তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক তা অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেয়া জরুরি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিমাসে এক শতাংশ হারে বাড়তে থাকা শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিতে ভর করে দ্রম্নত এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দেশে ব্যাপক ভোগ চাহিদা ও সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছর ধরেই ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। সম্ভাবনাময় এ অর্থনীতির হালচাল পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সরকার এবছর আট দশমিক এক তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আশাবাদী। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার আশা জাগানিয়া তথ্য সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা ও কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী হলেও আট দশমিক এক তিন শতাংশ অর্জন নিয়ে সন্দিহান বিশ্বব্যাংক। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের জিডিপিতে মোটা দাগে তিনটি খাত ধরা হয়। এগুলো হলো- কৃষির উৎপাদন, শিল্পের উৎপাদন এবং সেবা খাতের মোট ১৫ ধরনের সেবা। এগুলোর সম্মিলিত যোগফলকে মোট জিডিপি বলা হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ পর্যন্ত অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু দারিদ্র্যের হার কমছে না। বাড়ছে না কর্মসংস্থানও। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে পাচ্ছে না। এতে গ্রামের মানুষের আয়ের বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে। এর আগে সিপিডির এক গবেষণা তথ্যে বলা হয়েছিল, সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ গরিব মানুষের আয় কমেছে ৬০ শতাংশ, অন্যদিকে ৫ শতাংশ ধনী মানুষের আয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এতে বাড়ছে সম্পদের বৈষম্য। আয় ও সম্পদ বৈষম্য বেশি হলে আগে বা পরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে জিডিপির ওপর। আমরা মনে করি, কাঙ্ক্ষিত জিপিডি অর্জনের ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা অত্যন্ত জরুরি। উলেস্নখ করা যেতে পারে, রপ্তানি 'পারফর্মেন্স' প্রবৃদ্ধিতে বাড়তি অবদান রাখছে। পাশাপাশি শিল্প খাতের সম্প্রসারণ প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এভাবে বাংলাদেশ আগের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে এসেছে। তবে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণের বিষয়টিও স্বীকার করতে হবে। কেননা, ব্যাংকিং খাত নিয়ে এর আগে বহু প্রতিবেদন এসেছে গণমাধ্যমে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদেরও অজানা নয়। ফলে আর্থিক খাতে সংস্কারের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের যে তাগিদ রয়েছে সেটিও আমলে নেয়া দরকার কার্যকরভাবেই। মনে রাখা দরকার, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বেগবান করতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সড়ক-সেতুর মতো অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, রাজস্ব খাতের সংস্কার, ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া এবং ছোঁয়াচে খেলাপি ঋণ কমানোর যে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক তা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প থাকা উচিত নয়।