আগুনে পুড়ে আর কত মৃতু্য?

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ | ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে আগুনে পুড়েছে অন্তত ১২ হাজার মানুষ। আর এর মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ৯১৬ জন- এমন তথ্য যখন জানা যাচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তা অত্যন্ত ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সংশ্লিষ্টদের এটা ভেবে দেখা সমীচীন যে, এভাবে যদি মানুষ আগুনে পুড়তে থাকে, চলে যায় না ফেরার দেশে, তবে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। তথ্য মতে, ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন নিহত হয়েছিল। এ ছাড়া চলতি বছরের ২০ ফেব্রম্নয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনে প্রাণ হারান ৭০ জন। এর এক মাস পর গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডে ২৭ জনের মৃতু্য হয়। প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা দরকার, ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০০৪ সালে সারা দেশে ৭ হাজার ১৪০টি ও ২০০৫ সালে ৫ হাজার ৭৪৫টি ছোট-বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ নিহত হননি। তবে ২০০৬ সালে ৯ হাজার ৫৪২টি অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেছে ৯১ জন এবং আহত হয়েছে ৮৭৩ জন। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ২৮ হাজার ৪৮টি অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪৮০ জন। আর ২০০৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৮১টি। এর মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮৯ হাজার ৯২৩টি অগ্নিকান্ডে ১ হাজার ৪৩১ জন মানুষ পুড়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৩৬৫ জন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৯৫টি অগ্নিকান্ডে ৬ হাজার ৩৯৭ জন মানুষ পুড়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ৭১ জন। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪০ হাজার ৬৬৩টি অগ্নিকান্ডে ৪ হাজার ১৭৩ জন মানুষ পুড়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৪৮০ জন। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার, তথ্য অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছে ২০১৮ সালে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানী অগ্নিকান্ডসহ বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এখনো মানুষের মনে ক্ষত সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১১ জন নিহত হয়। এতে সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোশাকশ্রমিক। বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা সময়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা সামনে এসেছে। সঙ্গত কারণেই এটা আমলে নেয়া জরুরি যে, সারা দেশের অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রতিটি বাড়িতে ও পাড়া-মহলস্নায় ফায়ার ফাটিং সিস্টেম গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা সব আগুনই প্রাথমিকভাবে ছোট থাকে। আগুন লাগার সময় কালক্ষেপণ না করে তা যদি নেভানো যায়, সে ক্ষেত্রে আর বড় অগ্নিকান্ড ঘটে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১৫ বছরে ২ লক্ষাধিক অগ্নিকান্ডের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ফলে এটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনার ভয়াবহতাকে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণে সব ধরনের অনিয়ম রোধসহ সুউচ্চ ভবনে জলাধার নির্মাণ থেকে শুরু করে স্মোক ডিটেক্টর ও পর্যাপ্ত অগ্নিনিরোধক সরঞ্জাম মজুদের বিষয়টি আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। অগ্নিবিভীষিকার পুনরাবৃত্তি রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।