আলুর দাম বৃদ্ধি

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম এখন ৫০ টাকা। ভারত থেকে আলু আমদানি করার পরও আলুর দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে ভোক্তারা। এর আগেও আলুর মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন এ নিয়ে সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হিমাগার ও মজুতদারদের কারসাজিতে বাজারে এ অস্বাভাবিক দাম। এবার কী বলবে সরকার। দেশে এ বছর চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। বাড়তি আলুও আছে ব্যবসায়ীদের কাছে। কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীদের সরকারি বিভিন্ন তদারকি সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলেও তখন ওই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছিল। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে আলুর দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এবার প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। চাষিরা এ আলু বাজারে সর্বোচ্চ ১৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছেন। সব খরচ মিলে খুচরা বাজারে কোনোভাবে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আলুর একটা অংশ কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে আসে, কৃষকের কাছে কিছু মজুত থাকে এবং বাকিটা থাকে হিমাগারে। দেশের ৩৬৫টি হিমাগারে এ বছর ২৪ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। কৃষকের হাতে আলু শেষ হওয়ার পর হিমাগারের আলু বাজারে সরবরাহ আসতে থাকে। কিন্তু এ সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না। কৃত্রিমভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আলুর দাম বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে হিমাগার মালিকরা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়ছেন। এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৯০ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২২ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও গত প্রায় ১০ দিন ধরে আলু দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা এক সময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো, 'ভাতের পরিবর্তে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান।' খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক বেশি। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেড রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য দ্রব্য। এছাড়া আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তম। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এই ধরনের সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। খুচরা বাজারে যখন ৫০ টাকার নিচে আলু পাওয়া যাচ্ছে না, তখন আমরা হতাশ হই। অথচ কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের মানসিকতা এমন যে, অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে; সুতরাং, আলুর দামও বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও। দেশে আলুর সংকট নেই। আবার ভারত থেকে আলু আমদানিও করা হয়েছে। তারপরেও আলুর দাম কমছে না। আলু আমদানির পরও বাজার নিয়ন্ত্রণহীন থাকবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ জরুরি।