নেপালে নতুন জোটের শাসন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে কি?

রাজতন্ত্র বিলোপের পর নেপালে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন সংবিধান কার্যকর করার পর নেপালে বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় ছিল চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত কমিউনিস্ট দলগুলো। তবে তাদের মধ্যে দলাদলি ও জোট ভাঙাভাঙির প্রাবল্য দেখা গেছে, যা চীনকে ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু দলগুলোর ভাঙন ঠেকানো যায়নি। দল ভাঙলেও পার্লামেন্টে কমবেশি সব কমিউনিস্ট দলের আসন রয়েছে। এনসি-মাওবাদী সরকারে দুই দেশের প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য ছিল। নতুন বাম সরকারে আবার চীনা প্রভাব বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। তারা দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারবে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন।

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

আহমদ মতিউর রহমান
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পতনের মুখে পড়েছিল নেপালে পুষ্পকমল প্রচন্ডের জোট সরকার। সেখান থেকে ঝাকি খেয়ে ওঠে এসেছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের পর এক সময়ের মাওবাদী গেরিলা নেতা পুষ্পকমল দহল প্রচন্ড সে বছরের ডিসেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বাধীন নেপালি কংগ্রেস পার্টি এবং আরও কয়েকটি ছোট ছোট দলের সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গঠন করেন। এ নিয়ে তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তার মন্ত্রিসভার নেপালি কংগ্রেস পার্টির আধিপত্য বিরাজমান ছিল। এই আধিপত্য বিরাজ করা নিয়েই সম্প্রতি কোন্দল দেখা দেয়। দহলের দল মাওইস্ট সেন্টার পার্টির অভিযোগ, নেপালি কংগ্রেস পার্টি প্রধানমন্ত্রী দহলকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। দহল কয়েকজন মন্ত্রীর ওপর অসন্তুষ্ট এবং তাদের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে চাইছেন। কিন্তু নেপালি কংগ্রেস পার্টি তাতে বাধা সৃষ্টি করছে বলে ছিল অভিযোগ। নেপালের ২৭৫ সদস্যের পার্লামেন্টে সিপিএন (মাওইস্ট সেন্টার) তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। কিন্তু বাইরে থেকে সমর্থন নিয়ে মাওইস্ট নেতা পুষ্পকমল দহল ক্ষমতায় আসেন। এখানে একটা ঘটনা উলেস্নখ করার মতো। নির্বাচনের আগে বৃহৎ কমিউনিস্ট দল আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি মর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সিপিএন (ইউএমএল)সহ সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করেন প্রচন্ড। কিন্তু কোনো একক দল সংখ্যাপরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে রাজনীতি কঠিন হয়ে পড়ে। নির্বাচনের পর এই ইউএমএল-এর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় সরকার গঠন অসম্ভব হয়ে পড়ে মি. দহলের। এ পর্যায়ে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিগত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন লাভকারী নেপালি কংগ্রেস দহলকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় পাঠায়। বিরোধী দলে থাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া সিপিএন (ইউএমএল)। মাওবাদী কেন্দ্রিক কমিউনিস্ট দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হন দহল। নেপালে রাজতন্ত্র অবসানের পর থেকে কমিউনিস্ট দলগুলো ও নেপালি কংগ্রেসসহ অন্য ছোট ছোট দল পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় থেকেছে। নেপালি কংগ্রেস কিছুটা ভারতপন্থি অপরদিকে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো চীনপন্থি। নানা জল্পনাকল্পনা ও সমীকরণ সত্ত্বেও ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি দহলের সংখ্যালঘু সরকার আস্থা ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় টিকে যায়। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের জোট সদস্যদের সম্পর্কে চিড় ধরে। শুরু হয় রাজনৈতিক সংকট। প্রচন্ডের জোট শরিকরা গত মাসে সরকার থেকে বেরিয়ে গেছে। প্রচন্ড দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট পদে বিরোধীদলীয় একজন প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার প্রতিবাদে শরিকরা জোট ছাড়ে। গত ৪ মার্চ নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে তার জোট সরকারের অবসান হলে তিনি সিপিএন (ইউএমএল) ও অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে নতুন জোট করে নতুন সরকার গঠন করেন। প্রচন্ড ৯ মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বিরোধী দল থেকে রামচন্দ্র পাওদেলকে সমর্থন দেওয়ার পরিকল্পনা জানানোর পরই উপপ্রধানমন্ত্রীসহ অন্য আরও তিন মন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেওয়ায় টালমাটাল হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন জোট সরকার। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক জোটে চলমান তিক্ত সংকটের মধ্যেই গত ৯ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রামচন্দ্র পাওদেল। এই পদটি অলঙ্কারিক। পরোক্ষভাবে এই নির্বাচন করা হয়ে থাকে। পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের সদস্য এবং সাতটি প্রদেশের বিধানসভা সদস্যদের নিয়ে তৈরি ইলেক্টোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়। নেপালে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র অবসানের পর থেকে অন্তত ১৩ বার সরকার বদল হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ভয় পাওয়ায় তিন কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে শত শত কোটি ডলারের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর ধাক্কা ও তার আগে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেশটির অর্থনীতির ওপর আঘাত হানে। দহলের প্রেস সচিব গোবিন্দ আচার্য সংকটের আভাস দিয়ে জানান, তাদের মধ্যে মূলত নীতিগত পার্থক্য দেখা দিয়েছিল। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তিনি ইউএমএল এবং আরএসপিকে জোটের নতুন অংশীদার করতে চাইছিলেন। এর প্রেক্ষাপটে ইউএমএল প্রধান প্রদীপ গাওয়ালি বলেন, যদি দহল নেপালি কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে জোট 'ভাঙতে চান' তবে তার দল প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করবে। দহলের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী 'অকাজের' কয়েকজন মন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে চান। যাদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী প্রকাশ স্মরণ মাহাতও রয়েছেন। তিনি নেপালি কংগ্রেস পার্টির নেতা। মাহাতের নেতৃত্বে দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। এদিকে, মাহাত বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর নেপালের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো আছে। তবে শুধু দহলই নন বরং নেপালি কংগ্রেস পার্টি থেকেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক বিশ্ব প্রকাশ শর্মা। তিনি বলেন, মাওইস্টদের সঙ্গে জোট 'প্রায় ভেঙে পড়েছে'। সংকট অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে গত মাসে নেপালি কংগ্রেস সরকার থেকে বের হয়ে যাবার ঘোষণা দেয়। ২০০৮ সালে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয় নেপাল। তারপর থেকে দেশটি ১৩টি সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এই দোলাচলের মধ্যে ২০ মার্চ নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচন্ড পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে জয়লাভ করেন। নেপালি কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করায় আস্থা ভোটের আয়োজন করতে হয়। নিয়ম রয়েছে কোনো শরিক দল সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে প্রধানমন্ত্রীকে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পতনের মুখে থাকা নেপালের জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল এর আগে নতুন জোট গঠনের জন্য প্রধান দুই বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। লক্ষ্য ছিল সরকারকে টিকিয়ে রাখা। আস্থা ভোটে জয়ী হয়ে তিনি নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন। যেখানে প্রধান দুই বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল) এবং দ্য রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি (আরএসপি) থেকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রচন্ড এই আস্থা ভোটে নেপালি কংগ্রেস পার্টি এবং মাওবাদী সেন্টার পার্টিসহ অন্য আরও ৯টি ছোট দলের সমর্থন পেয়েছেন। প্রচন্ড ২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে তার পক্ষে ১৭২ ভোট পেয়েছেন এবং বিপক্ষে পড়েছে ৮৯ ভোট। পার্লামেন্টের স্পিকার দেবরাজ এ কথা জানিয়েছেন। আস্থা ভোটের এই ফল আসার পর প্রচন্ড টুইটারে লিখেছেন, 'আমি সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন এবং সমৃদ্ধির জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করছি।' ৬৮ বছর বয়সি প্রচন্ড ২০২২ সালের ডিসেম্বরে লিবারেল কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টি এবং রাজতন্ত্রীদের একটি জোটের নেতৃত্ব নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন। পুরনো জোট সঙ্গীদের সরিয়ে নতুন জোট গড়ার পর জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠন করেন। প্রথমে যাদের নিয়োগ দেন তাদের দুইজনই বিরোধী দুই রাজনৈতিক দলের নেতা। রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, মধ্যপন্থি নেপালি কংগ্রেস পার্টিকে (এনসিপি) জোট থেকে সরিয়ে দিয়ে ৪ মার্চ নতুন জোট সরকার গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী দাহাল। দলটি তার জোট সরকারের প্রভাবশালী অংশীদার ছিল। প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল বলেছেন যে, নতুন ক্ষমতাসীন জোট জাতির সমৃদ্ধির দিকে যাত্রা শুরু করার সংকল্প নিয়ে গঠিত হয়েছে। অভিন্ন নূ্যনতম নীতি অগ্রাধিকার এবং সমাধান প্রকাশের জন্য পাঁচটি ক্ষমতাসীন দল সম্প্রতি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন যে, সুশাসন ও সমৃদ্ধির জন্য জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন জোট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দহল সাবেক জোট সঙ্গী এনসিকে অপ্রয়োজনীয় হৈ চৈ সৃষ্টি করার অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নেপালি কংগ্রেসকে নিম্নকক্ষের বৈঠকে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে এবং ডিপিএম এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবি লামিছনের ইসু্যকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে রাজনীতি না করার জন্য অনুরোধ করেন। নেপালি কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা বারবার সমবায় জালিয়াতির বিষয়টি এবং এতে লামিছনের জড়িত থাকার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। এটা ছিল একটি গুরুতর অভিযোগ। লামিছন দাবি করেছেন যে, তিনি সমবায় তহবিল আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। লামিছন এর আগে তার মিডিয়া আউটলেটের সঙ্গে তার নাম মিশ্রিত করে সমবায় ঋণের খবর প্রকাশ করার জন্য কান্তিপুর মিডিয়া গ্রম্নপের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। নবগঠিত জোটের আট দফা সমঝোতা হয়েছে। সিপিএন-ইউএমএল, সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র), রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি এবং জনতা সমাজবাদী পার্টি নতুন সরকারের জন্য সহযোগিতার বিষয়ে এই আট দফা চুক্তিতে পৌঁছেছে। দলগুলো সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র) এর চেয়ারপারসন পুষ্পকমল দহলের নেতৃত্বে একটি নতুন সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে, যেখানে চারটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সুশাসন, উন্নয়ন, সামাজিক বিষয়ে অভিন্ন চিন্তাশক্তির মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়েছে। চারটি দল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চেয়ারপারসন পদের জন্য সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র) এর প্রার্থী এবং এনএ ভাইস-চেয়ারপার্সনের পদের জন্য সিপিএন-ইউএমএল-এর প্রার্থীকে সমর্থন করতেও সম্মত হয়। এই পদ নিয়েও এনসি সঙ্গে বিরোধ ছিল। একইভাবে সরকারে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় বরাদ্দের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। মোদ্দাকথা, দহল ও অলি তাদের ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করেছেন যাতে ২০২৭ সালের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি করা হবে। এখন কি হবে? পুষ্পকমল দহলের আগামী দিনগুলো পুষ্পময় থাকবে না কণ্টকাকীর্ণ হয়ে পড়বে এটা নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা কথা বলছেন। বিশ্লেষকরা সরকার পরিবর্তনকে নেপালের তিনটি রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস (এনসি), মাওবাদী কেন্দ্র এবং ইউএমএল-এর মধ্যে রাজনৈতিক ত্রিভুজ প্রেমে নতুন অধ্যায় বলে বর্ণনা করেন। এই অধ্যায়ে মাওবাদী প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার অংশীদার নেপালি কংগ্রেসকে পরিত্যাগ করে বছরাধিক কাল আগে যাকে পরিত্যাগ করেছিলেন সেই সিপিএন ইউএমএল-এর সঙ্গে আবার মিলিত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা এটাকে ভারতের পক্ষপুট থেকে বের হয়ে দেশটির চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার ঘটনা হিসেবে দেখছেন। কথা হচ্ছে দুই বছর মেয়াদে ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়টিতে দলগুলোর মধ্যে চিড় ধরা মোটেই অসম্ভর কিছু না। নেপালের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য স্থিতিশীল সরকার দরকার। সেটা হবে কি না সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের একটি অংশের মতে, নেপালের নতুন জোট শুধু দেশের রাজনীতিতেই প্রভাব ফেলবে না, বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে নেপালের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। চীন সব সময় চেয়েছে নেপালের বাম দলগুলো একত্রে থাকুক। আর মার্কিন-ভারত বস্নক-এর বিরোধিতা করেছে। মাওবাদী-এনসির সদ্যবিদায়ী জোট ভারতের স্বার্থের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হতো। রাজতন্ত্র বিলোপের পর নেপালে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন সংবিধান কার্যকর করার পর নেপালে বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় ছিল চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত কমিউনিস্ট দলগুলো। তবে তাদের মধ্যে দলাদলি ও জোট ভাঙাভাঙির প্রাবল্য দেখা গেছে, যা চীনকে ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু দলগুলোর ভাঙন ঠেকানো যায়নি। দল ভাঙলেও পার্লামেন্টে কমবেশি সব কমিউনিস্ট দলের আসন রয়েছে। এনসি-মাওবাদী সরকারে দুই দেশের প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য ছিল। নতুন বাম সরকারে আবার চীনা প্রভাব বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। তারা দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারবে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন। আহমদ মতিউর রহমান : প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক