বাংলাদেশ-ভুটান সমঝোতা সই

পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভুটান আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর একটি। সম্প্রতি বন্ধুপ্রতিম দেশটির সঙ্গে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য, কৃষি ও সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার, পর্যটন ও লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ ছাড়াও উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রানজিট সুবিধাসহ ৫ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের বৈঠক শেষে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটান পারস্পরিক স্বার্থে উভয় দেশের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকারের ব্যাপারেও ঐকমত্যে পৌঁছে। ভুটান বাংলাদেশের বাজারে ১৬টি পণ্য আর বাংলাদেশ সে দেশের বাজারে ১০টি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান সফরের সময়ও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানা যায়। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, দুটি দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক গতিশীল করতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। আর যখন জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ-ভুটানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের সাম্প্রতিক আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক হয়েছে- তখন উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতাগুলোও দ্রম্নততার সঙ্গে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায়। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটান সমঝোতা কার্যকরের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে আলোচনায় প্রাধান্য পায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অঞ্চলে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) সড়ক এবং রেল যোগাযোগের বিষয়টি একটি বড় উদ্যোগ। যদিও সব দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে তারপরও ভুটানের সংসদে এটি অনুসমর্থিত হয়নি। তবে ভুটানের নতুন সরকার এই উদ্যোগসংক্রান্ত বিলটি তাদের সিনেটের উচ্চকক্ষে আলোচনার জন্য আবার উপস্থাপন করবে এবং এটি পাশের বিষয়েও তারা আশাবাদী। ভুটান বিলটি অনুমোদন করলে আলোচ্য চারটি দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা যায়। আমরা জানি দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিজমবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ভুটান গেলে দু'দেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বাংলাদেশের নৌপথ ভুটানকে ব্যবহার করতে দেয়া এবং কৃষি, সংস্কৃতি, পণ্যের মান ইত্যাদি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশ ও ভুটান যখনই দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসেছে, তখনই উভয় দেশের সম্পর্ক আরও সংহত করার অঙ্গীকার করেছে দেশ দুটি। এটা ঠিক যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চল ও বিশ্বের বৃহত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করে চলেছে। আর বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর তালিকায় ভুটান বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশটির ভূমিকার কারণে। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করেছিল ভুটান। এ ছাড়া দেশ দুটি আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংস্থা সার্কেরও সদস্য। আর এখন উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরের আরও কাছে চলে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশ দুটির অধিকারে এমন অনেক কিছুই আছে যা বিনিময়যোগ্য হয়ে উঠলে দুই দেশেরই সমৃদ্ধি ঘটবে। আমরা মনে করি, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উভয় দেশের এমন অনেক পণ্যই রয়েছে, যা বৃহৎ আকারে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি উন্নত করা যেতে পারে। ফলে এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এবারের সমঝোতায় পর্যটন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এ ব্যাপারে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ থেকে যতসংখ্যক পর্যটক প্রতিবছর ভুটানে যান, বাংলাদেশে আগত ভুটানি পর্যটকদের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক কম। সুতরাং আমাদের দেশের পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটাতে পারলে ভুটানের পর্যটকদের অধিকমাত্রায় আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। সঙ্গত কারণে দেশীয় পর্যটনশিল্পের সম্প্রসারণে সরকার গুরুত্ব দেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। সর্বোপরি বলতে চাই, উভয় দেশ যেহেতু দ্বিপক্ষীয় নানামাত্রিক সহযোগিতা প্রসারের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে, সেহেতু সমঝোতাগুলো যাতে দ্রম্নত বাস্তবায়িত হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন ইত্যাদির মধ্যদিয়ে ভুটানের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক- এটাই প্রত্যাশা।