দুই স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

বখাটেদের উৎপাত কি থামবে না?

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর দিনে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করবে, তাদের হাতেই নির্মিত হবে দেশের ভবিষ্যৎ। সঙ্গত কারণেই শিক্ষার্থীদের মনোবল দৃঢ় করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বখাটেদের উৎপাত থেকে শুরু করে নানা কারণে যদি আত্মহত্যা বা নির্যাতন কিংবা যে কোনো হয়রানির ঘটনা ঘটে তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। ফলে এই ধরনের ঘটনা আমলে নিয়ে কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই আমরা মনে করি। সম্প্রতি বখাটেদের নিপীড়ন ও উৎপাত সহ্য করতে না পেরে গাজীপুর ও বরিশালে দুই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে এমন ঘটনা জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে যদি এই ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকে, তবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা কতটা তা নতুন করে বলার দরকার নেই। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এই ধরনের ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে- একদিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, অন্যদিকে বখাটের উৎপাত বা যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে প্রয়োজনে সর্বচ্চো কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বরিশালের নবম শ্রেণির ছাত্রী লিয়া আক্তার, উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে। গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের আলিমাবাদ রামচর গ্রামে নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে। ছাত্রীর মা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে আলিমাবাদ গ্রামের রোমান ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে লিয়াকে কু-প্রস্তাবসহ বিভিন্নভাবে নিপীড়ন করে আসছিল। এ ছাড়া বখাটেরা প্রায়ই তাদের মোবাইলে ফোন দিয়ে লিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইতো। তথ্য মতে, স্কুলছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে রোমনকে আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদে লিয়ার মৃতু্যর সঙ্গে রোমানের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে রামচর গ্রামের বিপস্নব নামের আরেকজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লিয়ার চাচাতো ভাই বিপস্নব সরদার দীর্ঘ দিন ধরে লিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু লিয়া কিছুতেই বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। লিয়ার ঝুলন্ত লাশ পাওয়ার পর থেকে বিপস্নব আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও জানা গেছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এটা ভেবে দেখা জরুরি যে, নবম শ্রেণির একজন ছাত্রী- তার মনে কতটা ভীতিসঞ্চার হলে কিংবা বখাটেরে উৎপাত কতটা ভয়ানক হলে সে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এ ছাড়া গাজীপুরে বখাটেদের অপমান সইতে না পেরে রাজেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী শিমলা রানী দাস আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা থানায় মামলা করেছেন। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাটিয়াবড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্কুলে যেতে- আসতে প্রায়ই এলাকার রাজ কুমার চন্দ্র মানিক ও রিপন চন্দ্র মনিদাস শিমলাকে উত্ত্যক্ত করত। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে পূজা চলার সময় তাকে অপবাদ দিয়ে অপমানজনক কথা বলে ওই দুজন। সে অপমান সহ্য করতে না পেরে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে এমন বিষয় সামনে এসেছে। আমরা বলতে চাই, শুধু এই ঘটনাই নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়েই বখাটেদের উৎপাত বা তাদের দৌরাত্ম্যের বিষয় সামনে এসেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক ঘটনাগুলো আমলে নেয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। দুই ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাটি আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।