বাঙালি সংস্কৃতির নিরন্তর চর্চা জরুরি

আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। এ ধরনের স্ববিরোধী সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে কি আমরা খুব বেশি দূর এগোতে পারব? শেকড়ের সন্ধান একদিন আমাদের করতেই হবে। ফিরে যেতে হবে শেকড়ের টানে। সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ, যা জীবনাচরণে ফুটে ওঠে। এটা নিরন্তর চর্চার বিষয়। মুখে এক আর কাজে অন্য- এভাবে আর যাই হোক বাঙালি সংস্কৃতি চর্চাকে বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যাবে না। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, মনুষ্যত্ব তথা মানবধর্মের সাধনাই হচ্ছে সংস্কৃতি।

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

সালাম সালেহ উদদীন
বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস হাজার বছরের। আর বাঙালির জীবনে সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। সমৃদ্ধ এই সংস্কৃতির সঙ্গে বর্ষবরণ উৎসব নিবিড়ভাবে জড়িত। বাংলা নববর্ষ যেমন সুর ও সঙ্গীতের, মেলা ও মিলনের, আনন্দ অবগাহনের, তেমনিই সাহস ও সংকল্পের। নতুন প্রতিজ্ঞা ও প্রত্যাশায় বুক বেঁধে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় বাংলা নববর্ষ। পহেলা বৈশাখ পরমতসহিষ্ণুতা, সদ্ভাব, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং বিবেক ও মনুষ্যত্বের দীক্ষা দিয়ে যায় আমাদের। তাই তো আমরা বলে উঠি- 'প্রাণে প্রাণে লাগুক শুভ কল্যাণের দোলা, 'নবআনন্দ বাজুক প্রাণে'। আজ 'মুছে যাক গস্নানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্মিস্নানে শুচি হোক ধরা'। বৈশাখের প্রথম সকালে রাজধানীর রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উচ্চারিত হলো- 'মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে'। দুঃখ-গস্নানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে তাই এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়ার দিনও পহেলা বৈশাখ। রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার নব-উন্মেষকালে ছায়ানট সেই যে কাকডাকা ভোরে রবীন্দ্রনাথের নববর্ষ বরণের আবাহনী গান গেয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, সেটি আজ রাজধানীবাসীর সবচেয়ে বড় উৎসবের কেন্দ্র। ছায়ানট সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন বলেছেন, 'অন্তরে ইচ্ছা জাগুক 'ওরা অপরাধ করে'- কেবল এ কথা না বলে প্রত্যেকে নিজেকে বিশুদ্ধ করবার চেষ্টা করি। আর আমরা যেন নীতিবিহীন অন্যায় অত্যাচারের নীরব দর্শকমাত্র হয়ে না থাকি। প্রতিবাদে প্রতিকার সন্ধানে হতে পারি অবিচল- নববর্ষ এমন বার্তাই সঞ্চার করুক আমাদের অন্তরে।' নিজস্ব সংস্কৃতিকে উপলব্ধি এবং এর নিরন্তর চর্চা করা যে কোনো জাতির জন্যই গৌরবের। এ গৌরব বাঙালি জাতিরও রয়েছে। হাজার বছরের বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি আমাদের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যের ধারকবাহক বাঙালি। এই বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত রূপ ফুটে ওঠে বাংলা নববর্ষের দিন। বাংলা নববর্ষ বাঙালির সমগ্র সত্তা অস্তিত্ব ও অনুভবের সঙ্গে মিশে আছে। এটা বাঙালি সংস্কৃতির উজ্জ্বল দিক। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আমাদের প্রাণের অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এ জাতি তার দেশকে ভালোবাসে, ভালোবাসে তার সংস্কৃতিকে। অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে এবারের নববর্ষ বরণ বাঙালি জাতিসত্তাকে আবারো সামনে আনা হয়েছে। সবকিছুর বিনিময়ে হলেও এ জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে, রক্ষা করবে প্রাণের চেয়ে প্রিয় এ ভাষা, হাজার বছরের সংস্কৃতি। বাঙালি জাতি গানে-কবিতায়, নানা লোকাচারে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দূর অতীত থেকেই বয়ে চলেছে নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সম্রাট আকবরের শাসনামলে কৃষিনির্ভর বাংলায় বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন চালু হয়েছিল, নানা বিবর্তনে তা আজো বহমান। এ দেশের বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে বাংলা নববর্ষ বহুকাল ধরে বরণীয়। চৈত্রসংক্রান্তির নানা লোকাচার আর নববর্ষ বরণে কৃষিজীবী সমাজের বিচিত্র আয়োজন লোকায়ত উৎসব হিসেবেও তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও বৈশাখের গুরুত্ব যথেষ্ট। বৈশাখের সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক যেমন নিবিড়, তেমনি অর্থনৈতিক সম্পর্কও তাৎপর্যপূর্ণ। পহেলা বৈশাখ ও নববর্ষ বাঙালির বিজয় পতাকা আকাশে তুলে ধরে। বাঙালির এই বিজয় হচ্ছে সংস্কৃতির বিজয়। এই সাংস্কৃতিক বিজয়ের ফল ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বাঙালির এই সর্বজনীন উৎসব। প্রতি বছরের মতো রাজধানী ঢাকায় এবারো রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাঙালির বর্ষবরণ শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানটিও এখন বাঙালির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্য এ কারণে যে, পাকিস্তানি শাসনামলে নববর্ষ উদ্‌যাপনকে বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করেছিল। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেছিল। এতে হাজার হাজার বাঙালি যোগ দিয়েছিল। এই দিন বাংলা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়। লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে চলে আসে। নববর্ষ মানে নবজাগরণ। বাঙালির পুরনো ঐতিহ্যকে শহরে থেকেই স্মরণ করি অথবা ঐতিহ্যের কাছে ফিরে যাই। বাঙালি নারীরা সুন্দরভাবে সেজে রমনা বটমূলে কিংবা ধানমন্ডি লেকে যায়, পুরুষরাও এই দিনে বাঙালি সংস্কৃতির ধারকবাহক হয়ে ওঠে। যে শ্রেণিটি বাংলার কৃষককে, এ দেশের গরিব মানুষকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে, পহেলা বৈশাখ তাদেরই প্রধান আহার পান্তাভাত এবং তারা খায় স্বর্ণমূল্যের ইলিশ দিয়ে। কেউ কেউ পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কাও খায়। তারা এসব খাবার খেয়ে মনে করে, অন্তত একদিন তো বাঙালি হলাম। এদিন আমরা চীনা রেস্তোরাঁয় কিংবা ফাস্টফুডের দোকানের খাবার ভুলে যাই। ঢোল কিনে জোরে জোরে বাজাই, বেলুন উড়িয়ে দেই মুক্ত আকাশে, প্রিয়ার খোঁপায় পরিয়ে দেই গাঁদা-গোলাপ। বাংলা গানের প্রতি অতিদরদি হয়ে উঠি। কান বিদীর্ণ করা শব্দে বাঁশি বাজাই। যেন এসবই আমাদের ধ্যান-জ্ঞান-প্রাণ। এসবই যেন আমাদের জীবনের অনিবার্য অধ্যায়। অথচ সারা বছর আমরা টিভিতে হিন্দি ছবি কিংবা হিন্দি সিরিয়াল দেখি। ইংরেজি নিয়ে কেবল গর্বই করি না, বাংলা-ইংরেজি মিশেল দিয়ে অদ্ভুত কায়দায় ইংরেজি বলি নিজের ব্যক্তিত্ব জাহির ও স্মার্টনেস শো করানোর জন্য। বাঙালি খাবার খই, মুড়ি, চিড়া, গুড়, ভাজি-ভর্তা, দেশি মাছ এসবের প্রতি এখন আমাদের অতিমাত্রায় উন্নাসিকতা, কেবল পহেলা বৈশাখ ছাড়া। আসলে আমরা নিজস্ব সত্তা ও স্বাতন্ত্র্য যে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য গ্রামীণ মেলা এখন আর আগের মতো বসে না। পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, জারি-সারি-ভাটিয়ালি গানের দিন শেষ। গ্রামীণ খেলা, দাঁড়িয়াবাঁধা, গোলস্নাছুট, কানামাছি, হা-ডু-ডু, লাঠিখেলা গ্রামীণ জনপদে তেমন একটা দেখা যায় না। কৃষিজমি দখল করে সেখানে তৈরি করা হয়েছে ইটভাটা, না হয় করা হচ্ছে হাউজিং বা শপিং মল। গ্রামে এখন তৈরি হচ্ছে উঁচু উঁচু ভবন। নগরায়ণের ছাপ পড়ছে সর্বত্র। একে ছাপ না বলে গ্রাস বলাই সঙ্গত। নদীতে পালতোলা নৌকা এখন আর চোখে পড়ে না। 'মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না'- এ গান এখন আর কেউ গায় না। নদী এখন ইঞ্জিনচালিত নৌকা দখল করে নিয়েছে। আর নদীর স্বচ্ছ পানি দখল করে নিয়েছে নাগরিক বর্জ্য। রাখাল গরুর পাল নিয়ে আর মাঠে যায় না। গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে দখল করে নিয়েছে নগর। যে নগর পশ্চিমা সংস্কৃতির আবহে উচ্ছ্বসিত ও ভারাক্রান্ত। এমন অবস্থায় একদিনের জন্য বাঙালি হয়ে হৈচৈ বাঁধিয়ে দেই। এর নাম কি মনেপ্রাণে বাঙালি হওয়া? আমরা মুখে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার কথা বলি কিন্তু কাজে উল্টো। আমরা যারা বাঙালি সংস্কৃতির ধ্বজাধারী বলে জাহির করি, তারা কিন্তু বাঙালি খাবার খাই না, জীবনাচরণেও বাঙালিপনা ফুটে ওঠে না। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াই; যার কারিকুলামে বাঙালি, বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের কোনো গন্ধ নেই। আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। এ ধরনের স্ববিরোধী সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে কি আমরা খুব বেশি দূর এগোতে পারব? শেকড়ের সন্ধান একদিন আমাদের করতেই হবে। ফিরে যেতে হবে শেকড়ের টানে। সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ, যা জীবনাচরণে ফুটে ওঠে। এটা নিরন্তর চর্চার বিষয়। মুখে এক আর কাজে অন্য- এভাবে আর যাই হোক বাঙালি সংস্কৃতি চর্চাকে বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যাবে না। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, মনুষ্যত্ব তথা মানবধর্মের সাধনাই হচ্ছে সংস্কৃতি। আমরা যা ভাবী, পছন্দ করি এবং যা প্রতিদিনের জীবনাচরণে প্রতিফলিত হয় তা-ই আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানে নিজস্বতা নিয়ে সুন্দরভাবে বিচিত্রভাবে বেঁচে থাকা। সংস্কৃতি মানে কেবল নাচ, গান, সিনেমা-নাটক নয়। বাঙালি যদি তার নিজস্বতা হারিয়ে বিদেশি সংস্কৃতিকে বুকে ও মনে ধারণ করে সারা বছর কাটিয়ে দেয় তবে একদিন পহেলা বৈশাখ পালন করে কী লাভ। পহেলা বৈশাখ আসলেই মঙ্গল শোভাযাত্রার কথা প্রাসঙ্গিকভাবেই সামনে চলে আসে। বাংলাদেশে বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ এই মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে, তখন তা অত্যন্ত সুখকর এবং ইতিবাচক। বলাইবাহুল্য, তালিকায় স্থান করে নেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চার দশকের এই ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলল। এই তালিকাভুক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার, যা বাংলাদেশের ঐহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সবাই মিলে, যাবতীয় ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির এক অপূর্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়। নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরো বিস্তার লাভ করুক এ প্রত্যাশা আমাদের। আমরা চাই বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যাশা, আবেগ ও অনুভূতিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। দেশ ও জাতির মঙ্গলে সবার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার- নতুন বছরে এ প্রত্যাশাই করছি। দেশ এবং দেশের ঐতিহ্য ও কৃষ্টি সম্পর্কে উৎকৃষ্ট চিন্তা করা এবং কাজের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটানোই হচ্ছে সংস্কৃতি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'বিদ্যাকে যদি হীরার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে তাহাতে দু্যতি ছড়িয়ে পড়বে সেই হবে তার সংস্কৃতি'। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, 'যতদিন বাংলার আকাশ থাকবে যতদিন বাংলার বাতাস থাকবে, ততদিন বাংলার সংস্কৃতি থাকবে'। কিন্তু বাংলা সংস্কৃতির চর্চা যদি বাঙালির মধ্যে না থাকে, বাঙালি যদি তার বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি ভুলে যায় এবং তার চর্চা থেকে বিরত থাকে তবে বাঙালির নিজস্বতা বলতে তো আর কিছুই থাকবে না। কেবল নামেই বাঙালি থাকবে। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমরা না সংস্কৃতিতে উন্নত, না রাজনীতি বা অর্থনীতিতে। মানুষ জীবন সংগ্রামে ও জীবনাচরণে কল্পনাতীতভাবে অন্য প্রাণীকে যে ছাড়িয়ে গেছে, তার উজ্জ্বল প্রমাণ তার সংস্কৃতি। প্রতিদিন সচেতন সাধনার দ্বারাই সংস্কৃতিকে আয়ত্ত করতে হয়। মানুষের সঙ্গে পশুর তফাত এই সংস্কৃতির জোরেই। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে গেছে নানা অপসংস্কৃতি। আমরা এখন অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার। ফলে আমরা না বাঙালিয়ানা রক্ষা করতে পারছি, না পারছি ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন হতে। এমন অবস্থায় বাংলা নববর্ষে অতিমাত্রায় বাঙালি সংস্কৃতির ধারক হয়ে ওঠা মানে হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভন্ডামি এবং নিজেকে মোড়ানো খোলস থেকে হঠাৎ বের করে আনা। আমাদের জীবন যে ধীরে ধীরে বদলে গিয়ে বিদেশি সংস্কৃতিনির্ভর হয়ে উঠেছে, তা টের পাই কেবল পহেলা বৈশাখ এলে। সারা বছরের জীবনাচরণ তো একদিনে বদলানো যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন সংগ্রাম ও সাধনার। সেই সাধনা কি আমাদের মধ্যে আছে? এই যে সাংস্কৃতিক বন্ধ্যত্ব এটা ঘোচাতে হলে এবং স্ববিরোধী সংস্কৃতি চর্চা বদলাতে হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি। প্রয়োজন উন্নত জীবন ও রুচি গঠন। শিক্ষিত সমাজের সংস্কৃতি ও অশিক্ষিত সমাজের সংস্কৃতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। উন্নত সমাজ গঠন করতে হলে ভদ্রজনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, তবে কোনোভাবেই শেকড়বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়। শেকড়বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানে দেশীয় সংস্কৃতির বাইরে চলে যাওয়া। আমাদের প্রবণতা সেদিকেই। আমাদের শেকড়সন্ধানী উন্নত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। সালাম সালেহ উদদীন: কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক