দরপতন অব্যাহত

পুঁজিবাজারের শঙ্কা দূর করুন

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উত্থান-পতন শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক চিত্র। তবে শুধু উত্থান যেমন সন্দেহের চোখে দেখা হয়, তেমনইভাবে ধারাবাহিক পতনের বিষয়টিও আশঙ্কার জন্ম দেয়। গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে শেয়ার বিক্রির চাপ চলছে পুঁজিবাজারে। এতে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে এবং দ্রম্নত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগে বাজার স্থিতিশীলতার পথেই এগোচ্ছে। কিন্তু দ্রম্নত পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, একটানা পতন বাজারের স্বাভাবিক চরিত্র হতে পারে না। যেহেতু পুঁজিবাজার নিয়ে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়, সেহেতু একটানা দরপতনের নেপথ্যে কোনো গোষ্ঠীর কারসাজি আছে কি না- আলোচিত হচ্ছে সে বিষয়টিও। তবে সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারের অব্যাহত দরপতন অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক- বাজার বিশ্লেষকরাও মনে করেন এমনটি। দেশের অর্থনীতিবিদরা 'দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের উৎস হতে পারে পুঁজিবাজার' বলে মন্তব্য করেছেন আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও মান উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ব্যাংকের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ প্রত্যাশা করেন। অথচ বিশ্বের কোথাও দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা নেই। অন্যান্য দেশে এ অর্থায়ন হয় পুঁজিবাজারে। ব্যাংক নির্ভরতা এবং ঋণ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতেও দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়ন হওয়া দরকার পুঁজিবাজারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের পুঁজিবাজার নিয়ে যে শঙ্কাজনক পরিস্থিতি মাঝেমধ্যেই সামনে আসে, তাতে এ খাতে বিনিয়োগের খরা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অযৌক্তিক নয়। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হলে পুঁজিবাজার যাতে স্থিতিশীল হয় তেমন পদক্ষেপই সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করা অপরিহার্য। উলেস্নখ করা যেতে পারে, অব্যাহত দরপতনের কারণে যখন বিনিয়োগকারীরা দ্রম্নত পুঁজি হারাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে তখন বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়। ফলে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। অন্যদিকে যেহেতু কৃত্রিম সংকটের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে, সুতরাং সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা আবশ্যক। মনে রাখা দরকার, পুঁজি হারাতে থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও পুঁজিবাজার নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবেন অনেকেই। বলাইবাহুল্য, ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজারের জন্য এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দফায় দফায় বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করলেও বাজারের উন্নয়ন ঘটেনি। অপরদিকে আগের ধারাবাহিকতায় বাংলা বছর শুরুর দুই কার্যদিবসের দুই দিনই দেশের বড় দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এটা ঠিক যে, সংশ্লিষ্টরা যথাযথ উদ্যোগ না নিলে পুঁজিবাজার আবারও কারসাজি চক্রের খপ্পরে পড়বে বলে যে আশঙ্কার কথা বলছেন বিনিয়োগকারীরা, সে আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমাদের পুঁজিবাজার নিয়ে নানান ঘটনা ঘটেছে অতীতে। পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আবার কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনাও সর্বজনবিদিত। ফলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হোক, এটাই প্রত্যাশা। সর্বোপরি বলতে চাই, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নীরবে পুঁজি হারানো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করার পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে বলে মনে করেছিলেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা ঘটেছে বলেই মনে হয়। এ অবস্থা অত্যন্ত হতাশাজনক। এভাবে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবে, বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসের জায়গা কমে যাবে তা হতে দেয়া উচিত নয়। মনে রাখা দরকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পুঁজি হারালে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বড় বিনিয়োগকারীদের ওপরও। আর বাজারের এমন অবস্থার পরও বিএসইসি কিংবা ডিএসই কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে; আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত পরিতাপের। প্রত্যাশা থাকবে, সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নততার সঙ্গে পরিস্থিতির উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে হলে স্থিতিশীল শেয়ারবাজার গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।