নির্যাতিত নারীর জবানবন্দি

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হোক

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও জনজীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সুবিচার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে কোনো নিদের্শ এলে তা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি নেয়ার দায়িত্ব নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। কেননা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে একজন নারী ঘটনার প্রকৃত বিবরণ দিতে পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের চেয়ে নারী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সহজভাবে বলতে পারবে এমনটি মনে করা সঙ্গত। বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি নারী নির্যাতনের ঘটনা এবং ফেনীর কলেজছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ ওঠার মধ্যে বিচারাঙ্গনে এই নির্দেশনা এলো। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি গত সোমবার এ নির্দেশনা পাঠান। আমরা বলতে চাই, এই নিদের্শনার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি কাম্য। প্রসঙ্গত, দেশে একের পর এক ধর্ষণ, নির্যাতনসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছেই, এমনসব নৃশংস ঘটনা ঘটছে তা যেন আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়। অথচ এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে না পারলে জনজীবনের স্বাভাবিকতাই ব্যাহত হবে, এমন আশঙ্কা অযৌক্তিক নয়। ফলে এই ধরনের ঘটনা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ জারি রাখা অপরিহার্য। উলেস্নখ্য, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি নেয়ার দায়িত্ব নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়ার নির্দেশনার বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিশেষ কর্মকর্তা বলেছেন, 'সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মসে'র সভার সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করলে প্রধান বিচারপতি সেটি অনুমোদন করার পর সোমবার সার্কুলার হিসেবে জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় রেজিস্ট্রার জেনারেল।' লক্ষণীয়, সার্কুলারে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এ বর্ণিত অপরাধ সংঘটনে ওয়াকিবহাল ব্যক্তির জবানবন্দি ওই আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়। অপরাধের তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে লিপিবদ্ধকৃত ওই জবানবন্দি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আর বর্তমানে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নেয়ার বিষয়টি 'স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস; জানতে পেরেছে বলে সার্কুলারে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, একজন পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নারী বা শিশু ভিক্টিম ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে সংকোচ বোধ করে। ফলে এরূপ নির্যাতনের শিকার শিশু বা নারী ঘটনার প্রকৃত বিবরণ দিতে অনেক সময় ইতস্তত বোধ করে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা আবশ্যক। তবে সংশ্লিষ্ট জেলায় বা মহানগরীতে নারী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে অন্য কোনো যোগ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে এ দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট। এ ছাড়া এ নির্দেশনা অনুসরণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলে তা সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনতেও অনুরোধ করা হয়েছে সার্কুলারে। আমরা বলতে চাই, নারী বা শিশু ভিক্টিম যেন প্রকৃত ঘটনার বিবরণ দিতে পারে সেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুবিচারের স্বার্থে তা জরুরিও। ফলে সামগ্রিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে নিদের্শনার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।