দুর্নীতির মহোৎসব

যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্নীতি চুরি কিংবা লুটপাটের বিপজ্জনক বিস্তার হলে তা সামগ্রিক সমৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধক বলেই প্রতীয়মান হয়। মনে রাখা দরকার, অগ্রগতির ধারা আরও গতিশীল করতে এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সঙ্গত কারণেই দুর্নীতিসহ যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে, তিতাসে গ্যাস-সংযোগে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ দেয়া, মিটার টেম্পারিং করা, কম গ্যাস সরবরাহ করেও সিস্টেম লস দেখানো এবং বাণিজ্যিক গ্রাহককে শিল্প শ্রেণির গ্রাহক হিসেবে সংযোগ দেয়া হয়। মূলত এ ধরনের ২২টি বিষয়কে প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতির উৎস বলে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এসব দুর্নীতি রোধে ১২ দফা সুপারিশও করেছে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, যদি একটি প্রতিষ্ঠানে ২২টি বিষয় দুর্নীতির উৎস হয় তবে এর ভয়াবহতা কীরূপ তা আমলে নেয়া সমীচীন। উলেস্নখ্য, দুদকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, তিতাস গ্যাসে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় গ্যাসের অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে। অবৈধভাবে বিভিন্ন কারখানায় গ্যাসের লোড নেয়া হয় এবং বাড়ানো হয়। এ ছাড়া লক্ষণীয় যে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, তিতাসে ৬ শতাংশ সিস্টেম লস হয় অবৈধ সংযোগের কারণে। আমরা মনে করি, এরূপ চিত্র অত্যন্ত উৎকণ্ঠার জন্ম দেয় যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। জানা যাচ্ছে যে, তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী তিতাসে কর্মরত নয়, এ রকম কিছু ব্যক্তির যোগসাজশে ঘুষের বিনিময়ে স্বাভাবিক সংযোগের পাশাপাশি চোরাই লাইনে সংযোগ দেন। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগের পাশাপাশি মিটার টেম্পারিংয়ের মাধ্যমেও তিতাসে দুর্নীতি হয়। কিছু অসাধু কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে মিটার টেম্পারিং করে গ্রাহকের প্রকৃত বিল গোপন করে থাকেন। ফলে সামগ্রিক এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিষয়টি নতুন নয়। দুর্নীতি নিয়ে এর আগেও পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। তিতাসে কেউ নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করলে বা অবৈধ সংযোগ বৈধ করার জন্য আবেদন করলে সেটি সহজে অনুমোদন পায় না। এর কারণ হিসেবে দুদক বলছে, বৈধ সংযোগের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পায় না! এ ছাড়া আমলে নেয়া দরকার যে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে দুদক বলছে, একটি অবৈধ সংযোগ নিতে তিতাসের কর্মচারীকে অবৈধভাবে ৪৫,০০০ টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হতো। এখন সেটি আরও বেশি! আমরা মনে করি, এই ভয়াবহতাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, তিতাসে দুর্নীতির মহোৎসব- এমন খবর পত্রপত্রিকায় আসলে তা কতটা পরিতাপের জন্ম দেয়, বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রম্নত উদ্যোগ নিতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মহোৎসব চলবে- এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিতাসের দুর্নীতি রোধে ১২ দফা সুপারিশ করেছে দুদক- এগুলো বিবেচনায় নেয়াসহ দেশের প্রত্যেকটি খাতে দুর্নীতি রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।