আবারও অগ্নিকান্ড

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা কুতুবখালী এলাকায় বুধবার মধ্যরাতে একটি মাদ্রাসা ভবনের নিচতলায় টেলিভিশনের গোডাউনে আগুন লেগে সেখানে রাখা মালামাল পুড়ে গেছে। এই ঘটনায় মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ভয়াবহ আগুনে মালিবাগ কাঁচাবাজারের প্রায় আড়াইশ দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। দোকানিরা কেউ হতাহত না হলেও আগুনে তাদের সর্বস্ব পুড়ে যাওয়ায় বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এই অগ্নিকান্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, আসন্ন শবেবরাত ও রমজান উপলক্ষে বাজারের প্রতিটি দোকানি তাদের শেষ সম্বল দিয়ে যথেষ্ট পণ্যসামগ্রী মজুদ করেছিলেন। তা পুড়ে যাওয়ায় তাদের এখন পথে বসতে হবে বলে আহাজারি করেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এ দুটি অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে সামনে রেখে বলতে চাই, অগ্নিকান্ডের বিভীষিকা থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা কতটা জরুরি বিষয়, তা একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনাই বলে দেয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এমন প্রশ্ন সামনে আসে যে, অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা কি থামবে না? আমলে নেয়া সমীচীন, রাজধানীর গুলশান কাঁচাবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর সপ্তাহ না ঘুরতেই খিলগাঁও কামারপাড়া বস্তি কাঁচাবাজারে আগুন লেগেছিল এবং এ ঘটনার মাত্র ১৪ দিনের মাথায় মালিবাগ কাঁচাবাজার ভস্মীভূত হওয়ার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এসব অগ্নিকান্ডের নেপথ্যে বিশেষ কোনো মহলের ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে এটাও উলেস্নখ করা দরকার, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রতিটি কাঁচাবাজারে আগুন লাগার ঘটনায় দোকানিদের অসচেতনতা এবং মার্কেট কমিটির দুর্বল তদারকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। একের পর এক অগ্নিকান্ড ঘটলেও তাদের কেউই সতর্ক হয়নি। প্রসঙ্গত বলতে চাই, রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ক্ষত শুকাতে না শুকাতে বনানীর একটি বহুতল ভবনে আগুনের বিভীষিকায় দগ্ধ হয়ে প্রাণহানি ঘটেছিল ২৫ জনের। চুড়িহাট্টার ঘটনার ৩৬ দিনের মাথায় ভয়াবহ ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জনমনে দেখা দিয়েছিল নানান প্রশ্ন। এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় যাদের প্রাণহানি ঘটেছে তারা কেউ আগুনে পুড়েছে কিংবা ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজনের মৃতু্য ঘটেছে বাঁচার চেষ্টায় লাফিয়ে পড়ে। আমরা বলতে চাই, রাজধানীসহ সারা দেশে আগুনের ঘটনা নেহাতই কম নয়। আগুনে প্রাণহানির ঘটনাও আঁতকে ওঠার মতো। বিপুল সম্পদহানি তো রয়েছেই। সহযোগী একটি দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সারা দেশে প্রাণহানি ঘটেছে ১৯৭০ জনের, আর দগ্ধ-আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৪২৫ জন। গ্রাম থেকে শহর, বস্তি থেকে শুরু করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন, দোকানপাট, গুদাম, মার্কেট কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান গ্রাস থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু কেন! বারবার কেন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছেই- এমন প্রশ্ন অযৌক্তিক হতে পারে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, টেলিভিশনের গোডাউনে আগুন, কাঁচাবাজারের দোকান ভস্মীভূতসহ ভয়ানক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছেই। এই সামগ্রিক বাস্তবতা কতটা ভয়ানক তা বিবেচনায় নেয়ার বিকল্প নেই। তাজরিন ফ্যাশন থেকে শুরু, এরপর নিমতলী, চুড়িহাট্টা হয়ে বনানীর বিভীষিকা। এর সঙ্গে কাঁচাবাজারে আগুন লেগে দোকান ভস্মীভূতসহ বিভিন্ন সময়ের অগ্নিকান্ডের নির্মম ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ করা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। মনে রাখা দরকার, কাঁচাবাজারে আগুন লাগার ঘটনায় দোকানিদের অসচেতনতা এবং মার্কেট কমিটির দুর্বল তদারকির প্রমাণ পাওয়া গেছে এমন বিষয় উঠে এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যে কোনো ধরনের অগ্নিকান্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত।