এবার রক্তাক্ত শ্রীলংকা

জঙ্গিবাদ নির্মূলের বিকল্প নেই

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় রক্তাক্ত হলো দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা। রোববার সকালে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে প্রার্থনার মধ্যে গির্জা এবং বিলাসবহুল হোটেল মিলিয়ে আটটি স্থানে এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। স্মরণকালের নৃশংসতম এ হামলায় ২৯০ জন নিহত এবং প্রায় ৫০০ জন আহত হয়েছেন। হামলায় নিহত ৩৫ জন বিদেশির মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকও রয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি আট বছরের জায়ান চৌধুরী ওই হামলায় নিহত হয়েছে। শ্রীলংকায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় গোটাবিশ্বই এখন শোকে মুহ্যমান। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কালো থাবা থেকে বিশ্বের নাগরিকরা কী নিরাপদ হবেন না- এমন প্রশ্নও উঠেছে রক্তাক্ত এই হামলার পর। কী সাংঘাতিক ও বর্বরোচিত হামলা। বিশ্বনেতারা ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির পুলিশ ২৪ জনকে আটক করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমসিংহে এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় দেশের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ ও শক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীই এ হামলা চালিয়েছে। ২০০৯ সালে মর্মান্তিক গৃহযুদ্ধের অবসানের পর দেশটিকে আবারও এমন ভয়াবহ সহিংসতা প্রত্যক্ষ করতে হলো। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যখন ইস্টার সানডে পালন করছিল তখন এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রথম হামলা হয় স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টায় তিনটি গির্জায়। গির্জাগুলো দেশটির কোচ্চিকাডে, নেগম্বো এবং বাট্টিকালোয়ায় অবস্থিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেগম্বোর সেন্ট সেবাস্টিয়ান গির্জার ছাদ বিধ্বস্ত হওয়া এবং রক্ত ছড়িয়ে থাকার চিত্র ভাইরাল হয়। ভাইরাল হয় রক্তাক্ত যিশুর ছবিও। অসংখ্য জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় বিস্ফোরণস্থলগুলোতে। সারা বিশ্ব যখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একাট্টা, সন্ত্রাসী নিধনে দেশে দেশে নানামুখী তৎপরতাও চলমান; এরই মধ্যে গত মার্চে নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে মসজিদে। ওই হামলাকারী ছিল অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। ওই হামলাকারী ইশতেহারে বলেছিলেন, আমি মনে করি এখানে হামলা হলে সভ্যতার ওপর সত্যিকার হামলার বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ হবে। সবাই জানবে বিশ্বের কোথাও নিরাপদ নয়। অনেক দূরবর্তী কোনো এলাকাও না। সবখানে আক্রমণকারীরা আছে। সত্যিকার অর্থে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলার পর স্পষ্ট যে, বিশ্বের এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে মানুষের নিরাপত্তা আছে। শ্রীলংকার সিরিজ বোমা হামলার পর আবারও আলোচনায় এসেছে যে, বিশ্ব এখন অনিরাপদ এবং বিপদসংকুল। দানবের খড়গ উন্মাতাল এখন মানুষের রক্ত নেশায়। সব ধর্মেই মানুষ হত্যাকে নিরুৎসাহিত করা হলেও এক শ্রেণির উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই দিয়ে অকাতরে মানব হত্যার উৎসবে নেমেছে, যা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এটা গর্হিত এবং অপরাধ। আর অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হবে এটাই প্রত্যাশা। উলেস্নখ্য, বিশ্ববাসী মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করছে। এসব ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। দেশগুলো পৃথকভাবে দেশের নিরাপত্তা জোরদার করলেও সন্ত্রাসী ঘটনা যে একেবারেই থেমে নেই তাও গণমাধ্যমের খবরে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হতে পারে। দেশে দেশে এমন বীভৎস, রক্তাক্ত হামলায় শোক ও সমবেদনা জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলতে হয়। ন্যক্কারজনক এমন হামলা থেকে কি বিশ্ববাসীর পরিত্রাণ মিলবে না, এমন প্রশ্নও যৌক্তিক নয়। সন্ত্রাসী হামলায় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে যে কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই কর্তব্য হওয়া দরকার নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদেরও একযোগে কাজ করতে হবে। শ্রীলংকায় হামলার পর, ইসলামী জঙ্গি সংগঠন এনটিজের নাম এসেছে; হামলাকারীর ছবি ও নামও প্রকাশিত হয়েছে। আত্মঘাতী হামলায় দুজন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলেও দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় যারাই সংশ্লিষ্ট থাক না কেন তাদের শনাক্ত করতে হবে। শুধু কথার কথা নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনই লক্ষ্য হওয়া দরকার। প্রত্যাশা থাকবে, বিশ্বনেতারা এমন পদক্ষেপ নিশ্চিত করুক যাতে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসীর কালো থাবায় আর যেন একটি প্রাণও ঝরে না পড়ে।