পাঠক মত

নুসরাতদের জীবন আর কত যাবে

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী চট্টগ্রাম
বাংলার একটি হাসি-খুশি মুখের নাম নুসরাত জাহান রাফি। সহপাঠীদের কাছে সে ছিল মেধাবী, সৎ ও নিষ্টাবান। রাফি পড়ালেখায়ও খুব মনোযোগী ছিল। সে কখনো ক্লাস পরীক্ষা ফাঁকি দিত না। মাদ্রাসার ক্লাস পরীক্ষায় সে সবসময় ভালো রেজাল্ট করত। ছাত্র শিক্ষক সবার কাছে রাফি ছিল মেধাবী একটি মুখ। সবসময় সে হাস্যোজ্জ্বল থাকত। রাফিদের পরিবারে রাফি ছিল অহঙ্কারের একটি নাম। কিন্তু রাফি তার আশা পূরণ করতে পারল না। রাফির ওপর কুনজর পড়ল সে মাদ্রাসার কুখ্যাত যৌনলিপ্সু অধ্যক্ষের। কুখ্যাত এই অধ্যক্ষ আরও অনেক ছাত্রীদের সঙ্গে কুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। এ নরপশু অধ্যক্ষের নামে জাতির একটি কলঙ্ক। আজকের এ দিনের ইতিহাসে সারা দেশের অধ্যক্ষের নামের এ কলঙ্ক একটি জঘন্যতম ইতিহাস সৃষ্টি করল। জঘন্য এ ব্যক্তি এবং এ ষড়যন্ত্র ও হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে কী বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। দেশের অজ গাঁ গ্রামে এ জাতীয় আরও অনেক নরপশু মানুষ নামে বিচরণ করছে। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাফিদের মতো অনেক প্রতিভা এসব নরপশুদের লালসার শিকার হয়ে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে পারছে না। অনেক খবর এ ধরনের থাকলেও পত্রিকার কাগজে ছাপা হয় না। চাপা পড়ে যায় এ ধরনের জঘন্যতম অপরাধের সংবাদ। এসব বিষয় রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে অসংখ্য রাফিদের মতো নারী শিক্ষার্থী মাঝ পথে শিক্ষাজীবন থেকে জীবন ও ইজ্জত বাঁচাতে ছিটকে পড়েন। হায় সমাজ! হায় শিক্ষক নামের কলঙ্ক? সমাজ, রাষ্ট্র ও সমাজকে আলোকিত করার কারিগর জাতির কর্ণধার হাতেগোনা কয়েকজন কুখ্যাত শিক্ষক নামের নরপশুর জন্য নারী শিক্ষার অগ্রগতি কী থেমে যাবে? না কখনো নারী জাতি মায়ের জাতি বিশাল এই গোষ্ঠীকে কখনো শিক্ষার আলো থেকে পিছে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, মহান সংসদের স্পিকার নারী। গৌরবের সঙ্গে তারা শাসন উন্নয়নে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য নারী গৌরবও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে নিষ্ঠা, পরিশ্রম, সততার সঙ্গে জাতিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়ন পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত অনেক সম্প্রসারিত। মহান সংসদে নারী সদস্যরা অত্যন্ত বুদ্ধিভিত্তিক তীক্ষ্নতার সঙ্গে রাষ্ট্রের মহান দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেশের আপামর জনগণের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে রাফির হত্যাচেষ্টার সংবাদে প্রধানমন্ত্রী তাকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিক সব রকমের চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে যত ধরনের উন্নত চিকিৎসা ছিল সব চিকিৎসার সুযোগ তার কাছে দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নুসরাত জাহান রাফিকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। সমাজ, রাষ্ট্র আজ গভীরভাবে মর্মাহত। রাফির জন্য শোকের ভাষা আমার জানা নেই। কাঁদছে পরিবার, কাঁদছে সমাজ, কাঁদছে রাষ্ট্র। তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী তার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাফির চিকিৎসা এবং কুখ্যাত নরপশু সে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আইনের আওতায় এনে বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই বিচার দেখতে চাই। অতীতে আরও বহুসংখ্যক নারী এভাবে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু সমাজ তাদের সঠিক বিচার দেখতে পায়নি। সে জন্য সুশীল সমাজ আপামর জনগণ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। যথাসময়ে যদি আইনের আওতায় এনে এসব নরপশুদের বিচার করা হতো তাহলে হয়তো নতুন নতুন রাফিদের এভাবে নির্মম হত্যার শিকার হতে হতো না। যত দ্রম্নত সম্ভব সর্বোচ্চ ও প্রকাশ্য শাস্তি দিয়ে কুখ্যাত এসব মানুষ নামক নরপশুর বিচার দেখতে চায় সমাজ। রাষ্ট্রের নিকট দেশের অভিভাবক মহলের আবেদন আর যেন কোনো নারীকে লালসার শিকার হতে না হয়। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন নজরদারি রাখা হয়। অসৎ দুশ্চরিত্র শিক্ষকদের কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে পবিত্র অঙ্গন শিক্ষা ক্যাম্পাস থেকে তাদের যেন বের করে দেয়া হয়। চারিত্রিক উন্নত আদর্শ ব্যতিরেকে কাউকে যেন শিক্ষানামক এ সেক্টরে নিয়োগ দেয়া না হয়। শিক্ষাকে পবিত্র রাখতে হবে। আমার ছেলে আমার সন্তানরা নিরাপদে শিক্ষাজীবন শেষ করে পরিবার ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ফিরে আসুক সেটাই এ দেশের অভিভাবক মহলের বাসনা। সে চিন্তা-চেতনা পাওয়া যেন অভিভাবক ও সমাজ পায় সে নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে দিতে হবে। নীতি-নৈতিকতার কেন্দ্র শিক্ষাঙ্গন থেকে সব ধরনের অনৈতিকতা বন্ধ করতে হবে। স্বল্প সময়ে কুখ্যাত অধ্যক্ষের নামে কলঙ্ক নরপশু ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের প্রকাশ্য কঠোরভাবে বিচার দেখতে চায় জাতি।