ঋণখেলাপি গণনায় ছাড়

ব্যাংকিং খাতের দুর্দশা দূর হোক

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ঋণখেলাপি সংক্রান্ত উদ্বেগ নিরসনে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। ঋণখেলাপি সংক্রান্ত উৎকণ্ঠা বিভিন্ন সময়েই পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, যত দ্রম্নত সম্ভব ঋণখেলাপি আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে, ঋণ দিয়ে তা আদায় করতে না পেরে বিপাকে পড়ছে ব্যাংক। লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সঙ্গত কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে গিয়ে মূলধন খেয়ে ফেলছে অনেক ব্যাংক। অথচ বলা দরকার, একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। ফলে এই খাতের যে কোনো উদ্বেগ নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। তথ্য মতে, ব্যাংকিং খাতকে দুর্দশা থেকে টেনে তুলতে খেলাপি ঋণ হিসাবায়নের বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, বর্তমানে কোনো ঋণের কিস্তি তিন মাস অনাদায়ী হলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ছয় মাস অনাদায়ী হলে সন্দেহজনক এবং ৯ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে মন্দমানে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয়। আর নতুন নীতিমালায় খেলাপি ঋণ হিসাবায়নের এ তিনটি ক্ষেত্রেই সময় বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের 'ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ' একটি সার্কুলার জারি করেছে, যা চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে কার্যকর হবে। গত ২১ এপ্রিল দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, সব ধরনের চলতি ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, ফিক্সড টার্ম লোন অথবা যে কোনো ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি, কিন্তু ৯ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ হিসেবে হিসাবায়ন করা হবে। আগে তিন মাসের বেশি অনাদায়ী থাকলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড গণনা করা হতো। ৯ মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ হবে। যা আগে ৬ মাসের বেশি ৯ মাসের কম অনাদায়ী ঋণকে ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ বলা হতো। আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ ব্যাড ডেট বা মন্দ ঋণ হবে। আগে ৯ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ মন্দ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হতো। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, সার্কুলারে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের একটা অংশ খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণখেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা হতো না। লক্ষণীয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। আমরা মনে করি, একদিকে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে, অন্যদিকে বিভিন্ন সময়েই ঋণখেলাপি নিয়ে যে উৎকণ্ঠা ও ব্যাংকিং খাতের নেতিবাচক বিষয় সামনে আসছে তার পরিপ্রেক্ষিতেও উদ্যোগী হতে হবে। এ ছাড়া আমলে নেয়া দরকার, ব্যাংকিং খাতে মন্দ বা খেলাপি ঋণ বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক এমন বিষয়ও সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এর আগেও এমন বিষয় উঠে এসেছিল যে, নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় বিতরণ করা ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। ফলে ঋণের বড় অংশই একের পর এক খেলাপি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাব এবং আইনের মারপ্যাঁচে ঋণ কেলেঙ্কারির হোতাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না এমন বিষয়ও উঠে এসেছিল। অথচ ব্যাংক খাতকে যে কোনো ধরনের অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করা আবশ্যক। মনে রাখতে হবে যে, বর্তমান বিশ্বে ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ফলে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে এ খাতে যেন কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা বা অনিয়ম না হয় সেটি রোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।