রমজান উপলক্ষে টিসিবির পণ্য বিক্রি

বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে ন্যায্যমূল্যে তিনটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তিনটি হলো সয়াবিন তেল, ডাল ও চিনি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। খুচরা বাজারের তুলনায় অনেক কম মূল্যে বিক্রি হবে। রমজান উপলক্ষে দেড় হাজার মেট্রিক টন ছোলা এবং ১০০ মেট্রিক টন খেজুর বিক্রি করা হবে। এ ব্যাপারে টিসিবি কর্তৃপক্ষ বলেছেন, চাহিদার চেয়ে দুই-তিন গুণ তেল ও ডালের মজুত রয়েছে। ক্রেতারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য পাবেন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ বিক্রি রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, বাজারে যদি নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকে, তা হলে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির প্রয়োজন পড়ে না। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয়, টিসিবির পক্ষ থেকে যত কথাই বলা হোক না কেন, রমজানের শুরুর দিকে পণ্যের সরবরাহ ঠিকই থাকে। কিন্তু রমজানের শেষ পর্যন্ত টিসিবি তাদের এই উদ্যোগ ধরে রাখতে পারে না। অতীতে এমনটাই হয়েছে। আমরা আশা করব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মনে রাখতে হবে, যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তারা পবিত্র রমজানে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পণ্য কিনতে চান। আর সঙ্গত কারণে টিসিবি থেকে পণ্য কিনে থাকে। কারণ বাজারের চেয়ে টিসিবির পণ্যের দাম অনেক কম থাকে। কিন্তু টিসিবি যদি রমজানের শেষ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট পণ্য সরবরাহ করতে না পারে তবে এটা তাদের সার্বিক ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত হবে। এ বিষয়টি টিসিবি কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার এটাও সত্য, সামর্থ্য না থাকলেও অনেকের টিসিবি থেকে পণ্য কেনার মানসিকতা নেই। তারা বাধ্য হয়ে বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সুতরাং রমজানে যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজের কেজি পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য পণ্যের দাম যে বাড়বে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে? এর মধ্যে বেড়েছে মাছ মাংস শাকসবজির দাম। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, মাছ মাংস শাকসবজি কিনতেই যদি সাধারণ মানুষকে হিমশিম খেতে হয় তা হলে অন্য সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তারা কী করে কিনবে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে তা আর সহজে কমে না। অর্থাৎ আগের জায়গায় আর ফেরত যায় না। দেশে কোনো পণ্যের দাম কমেছে, এমন খবর ক্রেতাসাধারণ খুব কমই পেয়েছে। যারা নিয়মিত বাজার করেন অথবা খোঁজখবর রাখেন বাজারের, তাদের পক্ষে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। ভেজাল খাদ্যপণ্যই যে কেবল জীবন বিনষ্টের উলেস্নখযোগ্য কারণ তা নয়, দেশের অতি উচ্চমূল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আনলে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মূল্য পরিস্থিতির কারণেও গৃহকর্তার জীবনঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে রমজান মাসে। যেভাবেই হোক, জনগণকে এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে। জনগণকে বারবার দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বে ফেলে দেয়া কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ নয়। তবে বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। যতদিন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানদারদের মানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততদিন বাজার নিয়ন্ত্রণহীন থাকবেই, টিসিবির পণ্য বিক্রি করেও খুব লাভ হবে না বা বাজারে এর প্রভাব পড়বে না এবং উপেক্ষিত হবে ক্রেতাস্বার্থ।