আশাব্যঞ্জক বিনিয়োগ

স্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করুন

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের অর্থনীতির সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি বিষয়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিদেশিদের কাছে বেশ আশা জাগানিয়া একটি বিষয় বলেই নানানভাবে সামনে এসেছে। বাস্তবতা হলো, ২০১৭ সালের পর হঠাৎ করেই বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দেয়। ওই সময় এফডিআই পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমে আসে। এরপর থেকে সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানান প্রণোদনা ঘোষণা করে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়। সরকারিভাবেও বিনিয়োগ বাড়াতে থাকে সরকার। আর সরকারের নানান উদ্যোগে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও গতি আসে। সম্প্রতি জানা যায়, দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) এবার স্বস্তি এসেছে। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। যা ২০১৭ অর্থবছরের চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি। এ পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মোট এফডিআইয়ের এক-তৃতীয়াংশই এসেছে বাংলাদেশে কার্যরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে। অঙ্কের বিচারে এর মোট পরিমাণ ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। আর নিরাপদ বিনিয়োগ ছিল ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। দেশীয় কোম্পানিগুলোতেও বিনিয়োগ এসেছে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, চাকরির বাজার তৈরি ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের দিকে নজর দিয়ে এই বিনিয়োগ আরও বাড়ানো দরকার বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিনিয়োগে গতি ফেরাতে যেসব খাতে বিনিয়োগ নিবন্ধন হচ্ছে তা সময়মতো বাস্তবায়নের দিকেও নজর দেয়া অপরিহার্য। স্বীকার করতে হবে, দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার তৎপর। ইতোমধ্যে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। সামাজিক সূচকেও দেশটির অগ্রগতি আশাপ্রদ। কিন্তু লক্ষ্য থেকে এখনো অনেক দূরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বিশেষত দ্রম্নত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বর্তমান প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশেও ওপরে থাকলেও তা টেকসই করা দরকার। আর এসব কিছুর জন্য চাই বিনিয়োগ। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিনিয়োগের চাকাও সেভাবে সচল করা যায়নি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে বিনিয়োগের অংশ ৩৫-৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, যা বর্তমানের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। এ অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা অধিক। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। উলেস্নখ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরি। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন সংস্কার। আমাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন শিল্প খাতে। একমাত্র শিল্প খাতে বিনিয়োগই পারে আমাদের বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বা স্বল্প দক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। তবে গার্মেন্টশিল্পের বিশৃঙ্খলা অনেক বিনিয়োগকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এ জন্য সংস্কার শুরু করতে হবে এখান থেকেই। শ্রমিক-মালিকের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। দেশের দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি আবশ্যক। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য জমি পাওয়ার বাড়তি খরচ, মামলা-মোকদ্দমায় জমির দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার। সস্তা শ্রমের কথা ভেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পেলেও অবকাঠামো সমস্যা পিছিয়ে দিচ্ছে, এ বিষয়েও নজর দিতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের যে রূপকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ করতে হলে প্রতি বছর শুধু বিদেশি বিনিয়োগই প্রয়োজন ১ হাজার কোটি ডলার। কৃষি ও গার্মেন্টের মতো উৎপাদন খাতে বেশ বিনিয়োগ এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও বিদু্যৎ খাতেও নতুন বিনিয়োগ আসছে। বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আদর্শ গন্তব্যস্থল বিবেচনা করা হচ্ছে বাংলাদেশকে। এগুলো আমাদের জন্য স্বস্তিকরই বটে। আমরা প্রত্যাশা করব, এটা ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং আগামী দিনে নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সরকারকে। দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠে তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।