ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি

যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই বিপুল জনগোষ্ঠীর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। একই সঙ্গে এটাও বলা দরকার, বিভিন্ন সময়েই চিকিৎসা খাত নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগও সামনে আসে। রোগীদের তুলনায় চিকিৎসক সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকট, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিসহ এরকম নানা অভিযোগ প্রতিনিয়তই সামনে আসে। ফলে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব বিষয়গুলোর সমাধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের সমতল অঞ্চলের তুলনায় পাহাড়ি জনপদে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। পার্বত্য তিন জেলাসহ ছোটখাটো পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত ১৩ জেলার ৭১টি উপজেলা এ রোগে আক্রান্তের শীর্ষে। এ ছাড়া সারা দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা মনে করি, যখন ১৩টি জেলাসহ সারা দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে- তখন বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, ম্যালেরিয়ার এই ঝুঁকির মধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল-মিলিয়ে বাংলাদেশেও বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস-২০১৯ পালন এবং দিবসটি উপলক্ষে এবারই প্রথমবারের মতো দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন করার বিষয়টি সামনে এসেছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'জিরো ম্যালেরিয়া স্টার্স্ট উইথ মি অর্থাৎ আমিই করব ম্যালেরিয়া নির্মূল'। আমরা বলতে চাই, ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং যে কোনো ধরনের সংকট থাকলে তা নিরসন করতে হবে। লক্ষণীয়, এ রোগে মৃতু্যহার কম হলেও প্রতিবছর আক্রান্তের সংখ্যা অনেক- এমনটি জানা গেছে। এর মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান তিন জেলা উচ্চ-ম্যালেরিয়াপ্রবণ। কারণ দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯১ শতাংশ এসব এলাকার। এরপর কক্সবাজার জেলাকে মধ্য এবং চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম ৯টি জেলাকে নিম্ন-ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, যখন পার্বত্য জেলাগুলোতে বেশি ম্যালেরিয়া প্রবণের কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় এবং বনাঞ্চল বেষ্টিত হওয়ায় সেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি- তখন এই এলাকাগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনে বিশেষভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া উলেস্নখ করা প্রয়োজন, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা- বাংলাদেশ, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে- আর এ লক্ষ্যে গত ১০ বছরে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন বা এক কোটির অধিক মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ১৩ লাখ মানুষের ম্যালেরিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ১০ হাজার ৫২৩ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালের তুলনায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শতকরা ৮৮ ভাগ এবং মৃতু্যর হার প্রায় ৯৫ ভাগ কমাতে সক্ষম হয়েছে যা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। সর্বোপরি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।