পাঠক মত
টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ উপকূলবাসীর প্রাণের দাবি
প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় সিডর, ইয়াস, আইলা, মহাসেন, বুলবুলের আঘাতের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি উপকূলীয় মানুষেরা। আবারও হানা দিল প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় রেমাল। লন্ডভন্ড করে দিল উপকূলীয় জনপদ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেড়িবাঁধবিহীন এলাকাগুলো। ষাটের দশকে নির্মিত হওয়া একাধিক বেড়িবাঁধ বিভিন্ন বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বারবার সংস্কার করা হলেও নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উপকূলীয় এলাকার মানুষ এখন ত্রাণ চায় না। তাইতো সবার প্রাণের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধের।
২০২১ সালের ১৬ জুন জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা 'ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই' লেখা পস্ন্যাকার্ডটি নিজের গলায় ঝুলিয়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবি তুলেছিলেন। 'মিথ্যা আশ্বাস আর নয়; এবার টেকসই বাঁধ চাই, আর চাইনা ভাসতে; এবার দিন বাঁচতে, উপকূলের কান্না- শুনতে কি পান না'- এমন বিভিন্ন স্স্নোগান তুলে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের সহস্রাধিক তরুণ ও স্থানীয় উপকূলবাসী। বরগুনার তালতলীতে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে মানববন্ধন করে সর্বস্তরের জনগণ। কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামহুরী নদীর বিএমচর কণ্যারকুম টার্নিং পয়েন্টে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় জনসাধারণ। গত ২৬ মে রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। সরকারি হিসাবে, ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে, ঘর ভেঙে ও দেয়াল ধসে পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। ঝড়ের মধ্যে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে উপকূলের বহু জনপদ তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ২০ জেলায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক হিসেবে বেরিয়ে এসেছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি আর বেশি। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি বোর্ড এলাকায় বাঁধটি বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর তীব্র গতির ঢেউয়ে ভাঙন শুরু হয়। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল সেখানে উপস্থিত হয়ে বাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে দু'টি ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র এস্কাভেটর) দ্বারা প্রায় ১৬ ঘণ্টা মাটি কেটে বস্তা ফেলে মূল বাঁধের পাশ দিয়ে আরেকটি বাঁধ তৈরি করা হয়। ঘূর্ণিঝড় শেষে দেখা গেছে ঢেউয়ের তোপে মূল বাঁধটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আর নতুন বাঁধটি টিকে গেছে। এছাড়া ডাকুয়া ইউনিয়নের তেঁতুলতলায় উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় নতুন করে কয়েক হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয় দুর্যোগকালীন। সরেজমিনে দেখা যায় এসব বেড়িবাঁধ বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শেষ মুহূর্তের কর্মকান্ডের জন্য বিলীন হয়ে যায়নি।এসব বেড়িবাঁধ রক্ষা করতে না পারলে গলাচিপা পৌরসভাসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে পানিতে নিমজ্জিত হতো এবং ভেসে যেত হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, পশু-পাখি, ফসলের ক্ষেত, মাছ, রাস্তাঘাট।
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে ১৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ ও ২ এর অধীনে ২০টি পয়েন্টে এসব বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীবেষ্টিত সুন্দরবনসংলগ্ন ব-দ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়নের সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন করে ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার বসবাসরত মানুষ।
বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। পায়রা ও বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বরগুনা সদর ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা নামক এলাকায় দু'টি গ্রাম ও আমতলী উপজেলার আড়পাংগাশিয়া ইউনিয়নের পশরবুনিয়া নামক এলাকায় তিনটি পস্নাবিত হয়েছে।
বেড়িবাঁধ হচ্ছে উপকূলের রক্ষাকবজ, বেড়িবাঁধ থাকলে উপকূলের মানুষ নিরাপদ থাকবে। মানুষের থাকার বাড়ি আছে, ঘরে খাবার আছে। তারা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু উপকূলীয় এসব মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। প্রতি বছর বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস গুঁড়িয়ে যায় তাদের স্বপ্ন। তাই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এখন উপকূলীয় মানুষের একমাত্র প্রাণের দাবি।
নিয়ামুর রশিদ শিহাব
শিক্ষার্থী
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে মৃতু্যর মিছিল
প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনা, ঝরে পড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। পত্রিকার পাতা খুললে এবং টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলেই ভেসে ওঠে সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক চিত্র। প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্য অবধারিত, তা সত্য কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মৃতু্য হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। ২০১৮ সালে সড়ক আইন সংশোধনের পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল সড়কে চলাচল জনসাধারণের জন্য আরও নিরাপদ হবে কিন্তু এখন তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ দেশে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। নিহত হয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন এবং আহত হয়েছে ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ জন এবং শিশু ১ হাজার ১২৮ জন। এর মধ্যে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৫৩২টি। অন্যদিকে ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র আরও ভয়াবহ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশে ৬,৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭,৭১৩ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ১২,৬১৫ জন। নিহতের মধ্যে নারী ১,০৬১ ও শিশু ১,১৪৩ জন। ২,৯৭৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩০৯১ জন, যা মোট নিহতের ৪০ দশমিক ০৭ শতাংশ। এ ছাড়াও বিআরটিএ'র তথ্যমতে চলতি বছরের মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৫০ জন এবং এপ্রিল মাসে মোট ৬৫৮টি দুর্ঘটনায় ৬৩২ জন নিহত হয়েছে, এভাবে প্রতি মাসে নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০২৪ সালে বার্ষিক মৃতু্যর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৭০০০, যা বিগণ কয়েক বছরের মাঝে সর্বোচ্চ।
ওপরের পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, মোট নিহতের ৪০ শতাংশই মৃতু্য বরণ করে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার কারণে। নিহতদের মধ্যে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যা বেশি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশেরই বয়স ২১ এর নিচে। যুবকরা আবেগের বশবর্তী হয়ে বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালায় বিশেষত, ঈদের দিন এবং বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে অপ্রাপ্ত বয়েসের ছেলেরা শখ করে মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাই অভিভাকদের সন্তানদেরকে গাড়ি দেওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এসব দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে চালকের অদক্ষতা, ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো এবং গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা, চালকের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, নেশাযুক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো ইত্যাদি। এছাড়াও তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালানো, ত্রম্নটিযুক্ত যান চলাচল, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, চলাচল অবস্থায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার, রাস্তায় গতিসীমা নির্দেশক ও স্পিড ব্রেকার না থাকা এবং প্রয়োজন পরিমাণ ওভার ব্রিজ না থাকা, জনসাধারণের ট্রাফিক আইন জানা না থাকা, জানা থাকেলেও আইন না মানার প্রবণতা। বিশেষ করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও দুর্বলতা, ফুটপাত হকারদের দখলে থাকা, পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনার ফলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বেড়েছে। কেউ কেউ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসার অর্থ জোগান দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার এই ভয়াভহতা প্রতিরোধ করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে: চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। প্রয়োজন পরিমাণ ওভার ব্রিজ নির্মান করতে হবে, রাস্তায় ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে, ওভার টেকিংয়ের ব্যাপারে চালকদের সতর্ক হতে হবে, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালককে অপসারণ করতে হবে, বিশেষ করে জনসাধারণকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত করতে হবে এবং আইন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। সর্বোপরি সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্র পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে এবং দেশ ও জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল আইনের সঠিক ব্যবহার করে এবং যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মমিনুল ইসলাম
শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া