সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি কার্যকর উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তথ্য মতে, পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট জেলায় প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ। উলেস্নখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৩ উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের সবশেষ অবস্থা জানিয়ে সিলেট জেলা প্রশাসনের বন্যা বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের নদনদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, সিলেটে দ্বিতীয় দফায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার বিষয়টি আমলে নেওয়া জরুরি। একইসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণেরও বিকল্প নেই।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিকাল ৬টার দিকে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার এবং সিলেট শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। এ ছাড়া সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। আর সারি-গোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টিও জানা যায়। আমরা বলতে চাই, যখন এটা সামনে আসছে যে, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার পানি ঢুকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে।
অন্যদিকে, জানা যাচ্ছে- উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে মৌলভীবাজারের নদনদীর পানি বাড়ায় চার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যাকবলিত এলাকার উঁচু স্থানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। জেলার সবকটি নদীতে উজানে বৃষ্টি হওয়ায় নদীগুলো পানিতে টইটুম্বর। বাড়ছে মনু, ধলাই, কুশিয়ারা, জুড়ি, কন্টিনালা ও ফানাই নদীর পানি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ধলই বিপৎসীমার সমান্তরালে অতিবাহিত হলেও বাকি সবকটি নদী বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনের শঙ্কাও। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই।
এটাও জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের প্রধান দুই নদী তিস্তা ও দুধকুমার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রতিনিয়ত বেড়ে বিপৎসীমার খুব কাছে রয়েছে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে সুনামগঞ্জ শহরের অধিকাংশ এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। কোরবানির ঈদের মধ্যে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদিনই সুনামগঞ্জ শহরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বিকালের দিক থেকে শহরের উত্তরাংশের সুরমা নদীর তীরবর্তী জনপদ থেকে পানি কিছুটা নামতে দেখা যায়।
আমরা বলতে চাই, পানিবন্দি দশা কিংবা বন্যার মতো পরিস্থিতিতে, পানিবাহিত রোগবালাই এবং বিশুদ্ধ পানি সংকট তৈরি হয়- যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কতটা চরমে ওঠে। দেশের বিভিন্ন সময়ের বন্যা পরিস্থিতি কিংবা পান্দিবন্দি দশায় মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে সেটি নানা সময়েই জানা গেছে। নানা ধরনের ফসল ডুবে যায়। শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকটও তৈরি হয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা জারি রাখা অপরিহার্য।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। ফলে, মনে রাখা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। ফলে সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।