১০টি সমঝোতা স্মারক সই

বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশ্নে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ঢাকা ও নয়াদিলিস্ন। এসব স্মারকের মধ্যে সাতটিই নতুন। আর তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। শনিবার দিলিস্নর হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর এসব সমঝোতা স্মারক সই হয়। আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। যা আমলে নিয়ে এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। জানা গেছে, দুই নেতার বৈঠকের আলোচনায় মূলত দুই দেশের মধ্যে সংযোগ, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সমুদ্রসম্পদ, বাণিজ্য, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অংশীদারত্বের বিষয় স্থান পায়। পরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হয়। আর বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতা, রেল, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহযোগিতা, মৎস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ ১০টি ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক সই হয়। নতুন সাতটির মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরভিত্তিক সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি হয় দুই দেশের সরকারের মধ্যে। এছাড়া সমুদ্রবিজ্ঞান এবং এ ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আরেকটি সমঝোতা চুক্তি হয় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) এবং কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ইন্ডিয়ার মধ্যে। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দুই দেশের মধ্যে ডিজিটাল ও সবুজ অংশীদারত্ব বিষয়ক নতুন দুটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। যৌথ কৃত্রিম উপগ্রহ প্রকল্পের জন্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথোরাইজেশন সেন্টার (ইন-স্পেস), ডিপার্টমেন্ট অব স্পেস, ভারতের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ডিএসসিসি, ওয়েলিংটন এবং ডিএসসিএসসি, মিরপুরের মধ্যে সামরিক শিক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য নতুন একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া মৎস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতার তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন হয়েছে এবার। আমরা বলতে চাই, যেসব সমঝোতা স্মারক সই হলো তা আমলে নিয়ে এর যথার্থ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। এছাড়া টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে বাংলাদেশ ও ভারত এক সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- যা আশাব্যঞ্জক। উলেস্নখ্য, বৈঠক 'ফলপ্রসূ' হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'উভয় দেশ একটি 'রূপকল্প' অনুমোদন করেছে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে দুই দেশই পরিচালিত হতে পারে। আমরা টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ডিজিটাল এবং সবুজ অংশীদারত্বের বিষয়ে একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছি।' ফলে সামগ্রিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ ভারত এই দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয় জড়িত। ফলে বহুমাত্রিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত এবং আরও গভীর হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও উষ্ণ হয়েছে। প্রসার ঘটেছে বাণিজ্যসহ সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্র। নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। এমনকি বারবার প্রতিশ্রম্নতি দেয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া বন্ধ হয়নি সীমান্তহত্যা- যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এসব দিক বিবেচনায় আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এসব সমস্যার সমাধান হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ঢাকা ও নয়াদিলিস্ন। ফলে এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা, তিস্তা, সীমান্ত হত্যাসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও গভীর হবে এবং দুই দেশে সহযোগিতার পরিধি আরও বিস্তৃত হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।