মানব পাচার নির্মূলের মান পুরোপুরি অর্জনে উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশগমনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ পথে বিদেশগমনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে, আবার অবৈধ বিদেশগমনের সঙ্গে মানব পাচারকারী চক্র জড়িত। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মানব পাচার নির্মূলের নূ্যনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। যদিও তা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার উলেস্নখযোগ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মূলত মানব পাচার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। তথ্য মতে, 'ট্রাফিকিং ইন পারসন্স (টিআইপি) রিপোর্ট-২০২৪' শীর্ষক প্রতিবেদনটি সোমবার প্রকাশ করা হয়। আমরা বলতে চাই, মানব পাচার নির্মূলের নূ্যনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে না পারলেও তা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার উলেস্নখযোগ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এটি ইতিবাচক। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, মানব পাচার নির্মূলের নূ্যনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। উলেস্নখ্য যে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার বিগত বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আগের মতো দ্বিতীয় ধাপেই (টিয়ার-২) রয়ে গেছে। এই ধাপে বাংলাদেশের প্রতিবেশীদের মধ্যে রয়েছে ভারত, ভুটান ও শ্রীলংকা। প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনে দেশগুলোর মানব পাচার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে কয়েকটি ধাপে। যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইনের (টিভিপিএ) বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে। মানব পাচার বন্ধে যেসব দেশ টিভিপিএ'র নূ্যনতম মানদন্ড অর্জন করতে পেরেছে, সেগুলোকে প্রথম ধাপে (টিয়ার-১) রাখা হয়েছে। আর যেসব দেশ নূ্যনতম মানদন্ড অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু উলেস্নখযোগ্যভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে দ্বিতীয় ধাপে (টিয়ার-২)। এছাড়া আর যেসব দেশ টিভিপিএ'র নূ্যনতম মানদন্ড অর্জন করতে পারেনি, আবার পাচার বন্ধে উলেস্নখযোগ্য চেষ্টাও চালাচ্ছে না, সেগুলোকে তৃতীয় ধাপে (টিয়ার-৩) রাখা হয়েছে। এছাড়া আছে বিশেষ ক্ষেত্রের স্পেশাল কেস) একটি তালিকা। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের মানব পাচার সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিবেচ্য যে, মার্কিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে পাচারকারীদের বিরেুদ্ধে তদন্ত, বিচার ও দোষী সাব্যস্তকরণ বাড়ানো। ফলে এই প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে হবে। এছাড়া প্রতিবেদনে যখন এটাও উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশ সরকার মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ নির্দেশিকা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে। পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের আগের চেয়ে বেশি শনাক্ত করেছে। নিয়োগকারী এজেন্টদের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহি বাড়াতে সরকার অভিবাসী শ্রমিক নীতি সংশোধন করেছে। তখন সার্বিকভাবে এই বিষয়গুলো ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মতো পাচারের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিতে তহবিল গঠন করেছে বলেও প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়। আমরা মনে করি, প্রতিবেদনে উলিস্নখিত বিষয়গুলো যেমন আমলে নিতে হবে- তেমনি এটাও এড়ানো যাবে না যে, প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নূ্যনতম মান অর্জন করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সরকার আইন প্রয়োগের প্রচেষ্টা বাড়ালেও অভ্যন্তরীণ পাচারসংক্রান্ত অপরাধ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। এর মধ্যে রয়েছে যৌন শোষণের উদ্দেশ্যে পাচার, জোরপূর্বক শিশুশ্রম কিংবা দাপ্তরিক জটিলতা। এছাড়া সরকার নতুন কোনো পাচারবিরোধী ট্রাইবু্যনাল প্রতিষ্ঠা করেনি। ভুক্তভোগী সুরক্ষার প্রচেষ্টা অপর্যাপ্তসহ নানা দিক প্রতিবেদনে উঠে আসে। আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। একইসঙ্গে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মানব পাচার নির্মূলের নূ্যনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ- এটা এড়ানো যাবে না। এছাড়া মানব পাচার পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে মার্কিন প্রতিবেদনে। সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া এবং মানব পাচার সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে। মানব পাচার নির্মূলের নূ্যনতম মান পুরোপুরি অর্জন করতে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।