সাইবার অপরাধ

নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে যে, অপরাধের ধরন যেমন বদলাচ্ছে- তেমনি তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। একদিকে সাইবার অপরাধ বাড়ছে এটি যেমন উদ্বেগের; অন্যদিকে, সাইবার অপরাধ বাড়লেও আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা কম বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, অপরাধের শিকার অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ হলেও মাত্র ১২ শতাংশ ভুক্তভোগী সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেন। আর বাকি ৮৮ শতাংশ ভুক্তভোগী আক্রান্ত হয়েও তা লুকিয়ে রাখেন। এর চেয়েও হতাশাজনক বিষয় হলো, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন, তাদের ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশই আবার কোনো সুফল পাননি! মূলত সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে 'বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা ২০২৪' শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। আমরা বলতে চাই, একদিকে সাইবার অপরাধ বাড়ছে; অন্যদিকে, এর আগে এই বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে যে, সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই। ফলে এমন পরিস্থিতিতে যখন জানা যাচ্ছে, অপরাধের শিকার অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ হলেও মাত্র ১২ শতাংশ ভুক্তভোগী সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন, তাদের ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশই আবার কোনো সুফল পান না- তখন সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তথ্য মতে, সাইবার অপরাধের শিকার ১৩২ জন ভুক্তভোগীর স্বপ্রণোদিত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে সিক্যাফ। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরেছে সংগঠনটি। আমরা মনে করি, সুপারিশগুলো আমলে নিতে হবে এবং বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের মানুষ। আর ১৮ বছরের কম অর্থাৎ শিশুদের আক্রান্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী ৩১ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই নারী। এছাড়া অপরাধের ধরনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং। এ হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। পর্নোগ্রাফি অপরাধ প্রবণতাও আশঙ্কাজনক। এ ধরনের অপরাধের হার ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। লক্ষণীয় যে, সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা বেশিরভাগই সামাজিক মর্যাদাহানির কথা বলেছেন। ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ভুক্তভোগী বলেছেন, তারা সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছে সামাজিক যে মার্যাদা ছিল তা হারিয়েছেন। এছাড়া ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ অপরাধের শিকার সবাই মানসিকভাবে কাতর ও চরম অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। উলেস্নখ্য, প্রতিবেদনের সুপারিশের অংশে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য সরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেওয়া দরকার। উৎকর্ষতা অর্জনে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে হবে। আমদানি-নির্ভর হওয়ার পরিবর্তে সাইবার সুরক্ষায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার ও অ্যাপিস্নকেশন তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে। আমরা মনে করি, সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া এবং সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণও অপরিহার্য। সর্বোপরি বলতে চাই, প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, অপরাধের ধরনও তত উন্নত হচ্ছে। ফলে এটিকে আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। সাইবার অপরাধীদের রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে রাখতে হবে। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে তা আমলে নিতে হবে। আর সাইবার অপরাধ বাড়লেও আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা কম- এটি এড়ানো যাবে না। মানুষকে সচেতন করাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।