দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য

কঠোর পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে আইনের শাসনের ঘাটতি আছেই বলে দুর্নীতিবাজদের কিছু হয় না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেছেন, দেশে দুর্নীতি দমন করতে চাইলে বড় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত দেখাতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে 'বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন: চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা' বিষয়ক একটি সেমিনারে মূল বক্তার বক্তব্যে খলীকুজ্জমান আহমদ এ কথা বলেন। মনে রাখতে হবে, নৈতিকতা-বহির্ভূত সব কাজই দুর্নীতি। ক্ষমতার অপব্যবহার করলে সেটাকে দুর্নীতি বলা যায়। কাজেই দুর্নীতি রাজনীতিতে থাকতে পারে, প্রশাসনে থাকতে পারে, প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারে। অর্থাৎ সর্বত্রই থাকতে পারে দুর্নীতি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজেটের ক্ষেত্রে কাজের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পূরণ না হলেও বাজেটের টাকা সবটুকুই খরচ হয়ে যায়। এর ফলে, বাজেট বাস্তবায়নেও অনেক দুর্নীতি করা হয়। আরেক ধরনের দুর্নীতি হয় আত্মীয়তার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কোনো কর্মকর্তার আত্মীয়কে কাজ পাইয়ে দেওয়া বা তার লাভের দিকে খেয়াল রাখাও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার কাজ যারা করবে তাদের অবশ্যই নৈতিকতা ঠিক থাকতে হবে। আর এই নৈতিকতা ঠিক না থাকাও এক ধরনের দুর্নীতি। বাংলাদেশে এই নৈতিকতাপূর্ণ লোক পাওয়া খুবই কষ্টকর। পাশাপাশি বাংলাদেশে দুষ্টচক্র বা সিন্ডিকেট বাজার থেকে শুরু করে ব্যাংকসহ সব প্রতিষ্ঠানে আছে। এই দুষ্টচক্র কিন্তু একা কাজ করে না, তারা যোগসাজশে কাজ করে। বাংলাদেশকে যদি দুর্নীতিমুক্ত করতে হয় তাহলে এই দুষ্টচক্রকে বিতাড়িত করতে হবে। যারা আমাদের সমাজে দুর্নীতি করে তাদের আমাদের বয়কট করা উচিত। এই দুর্নীতিবাজদের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা যাবে না। অন্যদিকে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল ও প্রকাশ সংক্রান্ত কর্মচারী বিধিমালা (আচরণ বিধিমালা) বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারছে না। বাংলাদেশ এক সময় দুর্নীতির জন্য পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দুর্নীতির সেই কলঙ্ক-তিলক মোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য যে, আমরা সমাজ-রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারিনি। যার কারণে আমাদের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তার রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি। ইতোমধ্যে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ। দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারা এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।