কোটাবিরোধী আন্দোলন যৌক্তিক সমাধান কাম্য

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোটা বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা এবং পুলিশের টিয়ার শেল, গুলি ও লাঠি চার্জের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকলেও গত মঙ্গলবার তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়, মঙ্গলবার এই আন্দোলন ঘিরে দিনভর সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন- যাদের মধ্যে কারো কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা বলতে চাই, আন্দোলনকে ঘিরে নিহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত শোকের। মৃতু্যর ঘটনাসহ যে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধান জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, কোটাবিরোধী আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা ঘটেছে। প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ ওর্ যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া মাদারীপুরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শকুনী লেকের পানিতে ডুবে যাওয়া দুইজনের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে দীপ্ত দে নামের কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উলেস্নখ্য, কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। একইসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকান্ডসহ সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি করছে সরকার। এছাড়া বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে তিনি এটাও বলেছেন যে, 'আমরা জানতে পেরেছি যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন, তারা বলেছেন, আন্দোলনের পাশাপাশি তারা আলাপ-আলোচনা করতেও আগ্রহী। আমরা তাদের এই আলাপ-আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী তাদের এই প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তাদের এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে (আইনমন্ত্রী) ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে বসব।' আমরা বলতে চাই, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে যে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। বিভিন্ন স্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া শুধু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথ দাপালেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এতে যোগ দেওয়ায় আন্দোলন আরও স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানা যায়। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সহিংস সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি রোধসহ কোটা সংস্কারের আন্দোলনের দাবি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধান জরুরি। বেশ কজন নিহত হওয়ায় নানাভাবে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে- যার পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা এবং পুলিশের টিয়ার শেল, গুলি ও লাঠি চার্জের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকলেও তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে- যা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ এবং এই ধরনের পরিস্থিতি হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধান দ্রম্নত খুঁজে বের করতে হবে - এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।