সবজিতে সেঞ্চুুরি বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন
প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজার। সবজির বাজারে যেন সেঞ্চুুরি হাঁকানোর প্রতিযোগিতা চলছে। অধিকাংশ সবজিই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছুটে চলছে ঊর্ধ্বমুখে। কোনোটি হাঁকিয়েছে ডাবল সেঞ্চুুরি। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কাঁচামরিচ। এই নিত্যপণ্যটি এখন ট্রিপল সেঞ্চুরি পার করে চারশ টাকায় উঠেছে। বাজারে এখন ১০০ টাকার নিচে মিলছে খুব কম সবজিই। সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির উৎপাদন স্থলেই দাম বেশি। বন্যা-বৃষ্টির কারণে গত এক মাসের মধ্যে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ ঠিক না হওয়ায় এখনো সেভাবে দাম কমেনি। ফলে, বেশিরভাগ সবজির দামই বর্তমানে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। বেগুন, করলা, বরবটির মতো নিত্যভোগ্যপণ্যসহ ১০টিরও বেশি সবজির দাম এখন ১০০ টাকার ওপরে। যেমন মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০-১৪০ টাকা এবং বরবটি ও কাঁকরোল ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি ২০০-২২০ টাকা। আর এক কেজি করলার দাম নেওয়া হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। এভাবে গাজর, শসা, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার ওপরে। এ ছাড়া ঝিঙে ও ঢঁ্যাড়সের দামও ১০০ টাকার আশপাশে। আর প্রতি কেজি কাঁচামরিচ এখন ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্ষাকালে এমনিতেই সবজির দাম কিছুটা বাড়তি থাকে। তবে এ বছরটা যেন ব্যতিক্রম। টানা বর্ষণের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ অনেক নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা গেছে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের অনেক এলাকাও বর্তমানে পানিতে ডুবে আছে।এতে সবজির সরবরাহ কমেছে। সরবরাহ কমায় সবজির দাম দফায় দফায় বেড়েছে।
সরকারি হিসাবে, দেশে তিন মাস ধরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে রয়েছে। অর্থাৎ খাদ্যপণ্য কিনতে গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি খরচ হচ্ছে। কিন্তু খরচের তুলনায় আয় বাড়েনি সাধারণ মানুষের। খাদ্যপণ্যের এই উচ্চমূল্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকার এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দাম বেঁধে দিয়ে এবং শুল্ক কমিয়ে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা যে কাজে আসেনি, তা খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিই বলে দেয়।
মনে রাখতে হবে, স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে চরম অসুবিধায় পড়ে। কয়েক অর্থবছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে, ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশে উৎপন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সব পর্যায়েই মনিটরিং থাকতে হবে- যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে না পারে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল যেসব সংস্থা আছে, সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে।