সমুদ্র অর্থনীতি সঠিক পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৫

অনলাইন ডেস্ক
বস্নম্ন ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি হলো অর্থনীতির এমন একটি বিষয়, যেখানে সুনীল অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো একটি দেশের সামুদ্রিক পরিবেশ কিংবা সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা, দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা, সামাজিক পুঁজি সৃষ্টি করা, আয় বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি পরিবেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা। বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির উপকরণগুলোর টেকসই উন্নয়নকে সমুন্নত করা এবং সামুদ্রিক সম্পদকে যথাযোগ্য ব্যবহার ও সরবরাহ করার মাধ্যমে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ 'স্মার্ট বাংলাদেশে' রূপান্তরিত হওয়ার এক ধাপ এগিয়ে থাকার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'বস্নু ইকোনমি'কে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মাছের রপ্তানি বাড়াতে মাছের সংগ্রহ, বিতরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যথাযথ মান বজায় রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। কারণ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হবে মাছ। সরকার প্রধান বলেন, সমুদ্র সম্পদের বহুমুখী ব্যবহার আমাদের অর্থনীতি 'বস্নু ইকোনমি'কে আমরা আরও সমৃদ্ধশালী করতে পারব। সেক্ষেত্রে আমি আশা করি, যারা বিনিয়োগকারী, যারা বাংলাদেশে এসেছেন বা যারা আমাদের দেশি বিনিয়োগকারী, আপনারা যৌথভাবে এই বিনিয়োগের ক্ষেত্র আবিষ্কার করে এখানে আরও বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষি খাতে জিডিপিতে ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ আর তার নিজের খাতে জিডিপিতে অবদান ২ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রায় ২ কোটি মানুষ এই মৎস্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর বছর ২ কোটি ৩০ লাখ টন অনুমোদিত টেকসই সামুদ্রিক খাদ্য ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয়, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের ১৪%। বিশ্বে ১০-১২ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবিকার জন্য সামুদ্রিক খাদ্যশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর ৩০% গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। বাণিজ্যিক পরিবহণের ৯০% সম্পন্ন হয় সমুদ্রপথে। ইউরোপের উপকূলীয় দেশগুলো অর্থনীতি থেকে প্রতিবছর বিলিয়ন ইউরো আয় করতে পারে, যা তাদের জিডিপির ১০ শতাংশ। প্রতিবছর সমুদ্রপথে ১৫০টিরও বেশি দেশের প্রায় ৫০ হাজারের ওপর বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে। গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি, বাংলাদেশের বন্দরের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের ফিডার পরিষেবা কার্যক্রম বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের বন্দরসমূহ কলম্ব, সিঙ্গাপুর বন্দরের মতো আরও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত চট্টগ্রাম কিংবা মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। একটি টেকসই সমুদ্র অর্থনীতির মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সঠিক মৎস্য আহরণ কৌশল অনুশীলন, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সমুদ্র থেকে নবায়নযোগ্য শক্তির অনুসন্ধান ও ব্যবহার, টেকসই সামুদ্রিক পরিবহণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোতে উপকূলীয় সম্প্র্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি। অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামুদ্রিক পরিবেশের হুমকি ও উদ্বেগ নির্মূলে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সামুদ্রিক পরিবেশ এবং সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার সংরক্ষণে কার্যবিধির সংস্কার ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। দেশের সুনীল অর্থনীতির মধ্যে মৎস্য, শিপিং, প্রতিবেশবান্ধব পর্যটন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত না করে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এই খাতে টেকসই উন্নয়ন অপরিহার্য।