আবার বন্যার শঙ্কা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বন্যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। অথচ এরই মধ্যে 'লা নিনা' সক্রিয় হয়েছে আর এ কারণে সারাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া উজানের দেশগুলোতেও বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, আগামী দুই সপ্তাহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। নতুন করে বিভিন্ন এলাকা পস্নাবিত হতে পারে। এতে শেষ আগস্টে বড় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু এ কথা ঠিক যে, যথাযথ প্রস্তুতি ও উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। ফলে, যখন এমনটি জানা যাচ্ছে যে, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। নতুন করে বিভিন্ন এলাকা পস্নাবিত হতে পারে- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তের ত্রাণ সহায়তাসহ পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। দেশের সচ্ছলদের বন্যার্তদের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।
উলেস্নখ্য যে, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে আছেন। শুক্রবার নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছে সাত বছরের এক শিশু। আবহাওয়া ও পানি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, ইতোমধ্যে সক্রিয় হয়েছে বৃষ্টিপাত তৈরির চক্র 'লা নিনা'। এতে বাড়বে বৃষ্টিপাতের মাত্রা- যা অন্তত ১৫০ গুণ এমনকি এর চেয়েও অতি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, দেশজুড়ে অতিভারী বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এই আশঙ্কাও উঠে এসেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাভাবিক বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ু অতি সক্রিয় হওয়ায় ভারী বৃষ্টির কারণেই মধ্য আগস্টের পর দেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এতে মাঠে থাকা আমন ধানের বড় ক্ষতি হতে পারে।
আমরা বলতে চাই, বন্যা ভয়াবহ রূপ নিলে তা কতটা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে সৃষ্ট আশঙ্কাকে সামনে রেখে যথাযথ প্রস্তুতি জরুরি। অন্যদিকে, এটাও বিবেচনায় রাখা দরকার, অতি খরা ও বৃষ্টি এল নিনো ও লা নিনো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দায়ী এল নিনো ও লা নিনা। জানা গেছে যে, লা নিনার প্রভাবে পাকিস্তান ও ভারতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ভারতের মৃতু্যর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসে মৃতু্য বাড়ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। এটাও লক্ষণীয়, অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে- যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এছাড়া আগস্টে দেশে বিচ্ছিন্নভাবে এক থেকে দুটি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আগস্ট মাসে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে বন্যা হতে পারে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ফেনীতে মুহরি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হচ্ছে।
সর্বোপরি আমরা উলেস্নখ করতে চাই, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, লা নিনা সক্রিয় হওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অন্যদিকে, ২০১৭-১৮ সাল ছিল লা নিনা বছর। অধিকাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সময়ে হয়েছে এবং অনেকটা লা নিনার কারণে হয়েছে। ২০১৭ সালে হাওড়ে আগাম বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তখন ধনাঢ্য কৃষকরা ভাতের অভাবে হাত পাততে বাধ্য হন। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কাকে সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত হবে -এমনটি কাম্য।