এসএসসির ফল এবং নতুন সময়ের প্রত্যাশা

ভর্তি শেষে সব কিছুই নতুন। প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ, বই, বন্ধুবান্ধব সব কিছুতেই একটা নতুনত্ব ও আবেশ। এই আনন্দ আবেশে ডুবে গেলে চলবে না বরং যোগ্যতা প্রমাণের তীব্র প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অধ্যক্ষ কর্নেল নুরন্‌ নবী (অব.)
গত ৬ মে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্র্থী অংশগ্রহণ করে এবং ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন পাস করে। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ, ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে এসে পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে, শুধু এসএসসিতে এ বছর পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ যা গত বছর ছিল ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ এসএসসিতে পাসের হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী পরীক্ষায় এবার পাসের হার বেড়েছে তবে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গত বছরের তুলনায় এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তি কমেছে ৫ হাজার ৩৫টি। জিপিএ-৫ কিছুটা কমলেও ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখব; কারণ ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার বেড়েছে। বিশেষত, মানবিক বিভাগে ২০১৮ সালের তুলায় পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান বাড়ার পাশাপাশি কমেছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। ফলাফলের আরেকটি বিশেষ দিক ছিল পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির বিবেচনায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এগিয়ে থাকা। সর্বোপরি একটা সুন্দর ফলাফলে বৈশাখের খরতাপ আনন্দের বন্যায় মিলিয়ে যাবে এমনটাই স্বাভাবিক। আসলে হয়েছেও তাই। উলস্নাসে মেতে ওঠা তারুণ্য জানান দিয়েছে আমরা জেগেছি- আমরা আসছি একটা সুন্দর ভবিষৎ দেখব বলে। যারা ফলাফল বিশ্লেষণ করেন তারাও এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। বিশেষত, গণিত ও ইংরেজিতে ভালো করা, প্রশ্নফাঁস না হওয়া এবং আগের তুলনায় নকল প্রবণতা কমে যাওয়াকে বিশ্লেষকরা ভালো ফলের নিয়ামক হিসেবে তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গত, আমরাও বিষয়টিকে এভাবেই দেখব। ইতোমধ্যে ১২ মে থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে ও এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে এটি চলবে ২৩ মে পর্র্যন্ত। একটি সুন্দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজের পছন্দের কলেজ খুঁজে নেবে এমনটাই প্রত্যাশা। এত ভালো কিছুর পরও কিছু সংশয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তুলবে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত তথ্য থেকে আমরা জেনেছি একাদশ শ্রেণিতে যা চাহিদা তার চেয়েও ১২ লাখ আসন বেশি আছে কিন্তু আসন বেশি থাকলেও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে একটা মহা উৎকণ্ঠা যথারীতি থাকছেই। মানসম্মত কলেজে ভর্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠায় থাকেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। বিষয়টা এরকম যে, জিপিএ-৫ পাওয়া সত্ত্বেও প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষার্থী প্রথম সারির কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ নাও পেতে পারে। এই শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই হয় বিজ্ঞান বিভাগের। আমার মনে হয়, শহরের পাশাপাশি জেলা ও জেলা শহরের বাইরে যদি মানম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া যায় এবং সেইভাবে শিক্ষার মান ধরে রাখা যায় তবে আগামীতে এই সমস্যা মোটেও সমস্যা বলে মনে হবে না। যা হোক, একটা কথা শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে- পড়াশোনার ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কেননা, পরবর্তী জীবনের জন্য ক্যারিয়ারের ভীত এখানেই রচিত হয়, তাই সিদ্ধান্ত নেবে সতর্ক এবং সচেতনভাবে- যা তোমার লক্ষ্য ঠিক রেখে গন্তব্যে পৌঁছতে সহায়তা করবে। এইচএসসির দুনিয়ায় প্রবেশ করার আগে একটু ভাবতে হবে আমি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছি তার অবস্থা বিশেষত একাডেমিক অবস্থা কেমন অর্থাৎ ভর্তি হওয়ার পরে না ভেবে যা ভাববার ভর্তির আগে ভাবতে হবে। প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভাগ বিষয় নির্বাচন একটি বিবেচ্য বিষয়। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ছিলে এখন ব্যবসায় শিক্ষা নিতে চাও বা ব্যবসায় শিক্ষা থেকে মানবিকে আসতে চাও এই সিদ্ধান্তগুলো যথেষ্ট ভেবে চিন্তে নিতে হবে। অর্থাৎ ভালো করার বিশ্বাস ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ থেকে যা করার তাই করতে হবে। ভর্তি শেষে সব কিছুই নতুন। প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ, বই, বন্ধুবান্ধব সব কিছুতেই একটা নতুনত্ব ও আবেশ। এই আনন্দ আবেশে ডুবে গেলে চলবে না বরং যোগ্যতা প্রমাণের তীব্র প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করতে হবে। সবসময় একটা কথা মনে রাখবে, তোমার পাশে স্বপ্ন আছে যা পূরণে তোমাকে পরিশ্রম করতে হবে আর এই শ্রমের অর্থই হলো নিরেট অধ্যাবসায়। অধ্যক্ষ কর্নেল নুরন্‌ নবী (অব.): সাবেক অধ্যক্ষ. রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এবং মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা মডেল টাউন, উত্তরা, ঢাকা