মাথাপিছু আয়ে রেকর্ডের পূর্বাভাস

ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত থাকুক

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং আয় বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত আছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ এবং গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে ২০৩০ সালে মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ সময়ের মধ্যে ভারতের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪০০ ডলার আর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৭০০ ডলার। অর্থাৎ ভারতের চেয়ে ৩০০ ডলার এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে বলেছিলেন বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার অতিক্রম করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে আট ভাগ। দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতি খুবই আশাপ্রদ খবর। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাথাপিছু আয় ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পরিমাণে অর্জিত হয়েছে বতর্মান সরকার আমলে। এমন অর্জন সরকারের মুকুটে সাফল্যের পালক যোগ করেছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, আন্তর্জাতিক এই ব্যাংক বলছে, আগামী ২০২০-এর দশকটা হবে এশিয়ার। কারণ এ অঞ্চলের দেশগুলো এ দশকে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের আশপাশে ধরে রাখতে সক্ষম হবে। তবে তালিকার সেরা ১০টি দেশ হবে এশিয়া ও আফ্রিকার। চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা এবং মোজাম্বিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘরে ধরে রাখবে বলেও মনে করছে গবেষকরা। তারা মনে করছেন, এশিয়ার মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ফিলিপিন প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষে থাকবে। তবে ভালো পূর্বাভাস রয়েছে ভিয়েতনামের পক্ষে। ২০৩০ সালে ভিয়েতনামের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৪০০ ডলারে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে সমগ্র বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ লোকের বাসস্থান হবে আর জনসংখ্যার এই বৃদ্ধিকে ভারতের জন্য আশীর্বাদ উলেস্নখ করে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের সুফল পাবে বাংলাদেশ। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে জানা যায়, প্রবৃদ্ধির উচ্চগতি দেশগুলোকে চরম দারিদ্র্যের হার কমাতে সাহায্য করবে, সবার জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় জনগণের প্রবেশ সহজলভ্য হবে। আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশগুলোর সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমে আসবে। এ বিষয়গুলোও আশা জাগানিয়া। তবে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিশ্লেষকরা উলেস্নখ করেছেন আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট। ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র না ভাঙা গেলে এ সংকট আরও তীব্র হতে পারে- এমন সতকর্তাও রয়েছে তাদের। সরকারের প্রচেষ্টায় দারিদ্র্য কমছে ঠিকই, তবে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগের। মূলত সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে- এমন ধারণার বিপরীতে মাথাপিছু আয়ের ঊধ্বর্গতির সুফল সমাজের সর্বস্তরে কীভাবে পৌঁছানো যাবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জোর দিতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মতো বিষয়গুলো কঠোরভাবে প্রতিরোধ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করতে হবে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে এসব নেতিবাচক অনুষঙ্গ কমে আসবে বলে মনে করা অযৌক্তিক নয়। বতর্মান সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে তৎপর, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা অব্যাহত আছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাণিজ্য, বৈদেশিক আয় ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে আগের তুলনায়। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে হাঁটছে দেশ। এরপর যখন পূর্বাভাস রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে যাওয়ার, তখন আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলোও নিরসন করতে হবে। বৈষম্য বিলোপে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা গেলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির শতভাগ সুফল দেশবাসী পেতে পারে। এটি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।