বাঁচলে কৃষক, বাঁচবে দেশ

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

মো. তাসনিম হাসান (আবির) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। কৃষির ওপর নির্ভর করেই তাদের সংসার চলে। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ; তারা এই সোনার ফসলের ওপরেই নির্ভরশীল। সারাটা মাস, সারাটা বছর পরিশ্রম করে শুধু দিন শেষে যাতে তাদের সন্তাদের মুখে হাসি ফোটে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা সমাজের মুখে গ্রাস তুলে দেয়। বিনিময়ে আমরা যাই কিছুই দেয় না কেন তাদের শ্রমের সমতুল্য হবে না। তবুও যাতে তারা দিনশেষ তাদের সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারে তাই তাদের ন্যায্য অধিকার দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের খুব শুভ বার্তা দিচ্ছে না। বর্তমানে কৃষকদের অবস্থা সব থেকে করুণ। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার তো পাচ্ছেই না, বরং আরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে কৃষকের এত পরিশ্রমের ফসল তারা এখন নিজেরাই জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কয়দিন আগেই আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি যে, টাঙ্গাইলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের দিনমজুরি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। আর হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আব্দুল মালেক সিকদার নামের একজন কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় নিজের ফসলের ক্ষেতে সে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। একজন কৃষক কতটা নিরুপায় হলে তার নিজের কষ্টের ফলকে এভাবে নিজে হাতে ধ্বংস করে। এটা আমাদের সমাজের জন্য এক অশনিসংকেত। ওই এলাকায় এমন আরও কৃষক তাদের ফসল এলাকাবাসীদের বিনামূল্যে দিয়ে দিচ্ছে। তারা তাদের ফসল জমি থেকে কেটে নিয়ে নিজেরা অর্ধেক নিচ্ছে আর মালিকদের অর্ধেক দিচ্ছে। এভাবে আমাদের কৃষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা যারা শহরে থাকি, বড় বড় অট্টালিকার উপরে বসে আছি, আর প্রস্তুতকৃত চাল নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসে উপভোগ করছি, তারা যদি একটু হলেও ওই সমস্ত কৃষকভাইদের কথা চিন্তা করত বা যারা ব্যবসায়ী তারাও যদি একটু চিন্তা করত তাহলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। মনে রাখতে হবে আমার দেশের কৃষক যদি বাঁচে তবে আমার দেশ বাঁচবে,আমাদের দেশের মানুষ বাঁচবে। আর কৃষকরা যদি এভাবে দিনের পর দিন বঞ্চিত হতে থাকে তবে সেটা আমাদের অর্থনীতির ওপরেই প্রভাব পড়বে। কারণ এতে করে আমার দেশের কৃষকরা তাদের কৃষিকাজ থেকে সরে আসবে। প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে পত্রপত্রিকায় এটা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ব্যবসায়ী মহল এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এখন সরকারকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের এই কৃষক সমাজকে বাঁচাতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে আর কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে কৃষককে তাদের ন্যায্য অধিকার পাইয়ে দিতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশের কৃষক সমাজের সঙ্গে সেটা অন্যায় হবে। কারণ বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি, কৃষির আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি মিলিয়ে একজন কৃষকের যে খরচ হচ্ছে তাতে সেই পরিমাণ লাভ তো হচ্ছেই না বরং তাদের আসলটাও উঠছে না। এখন সরকারকে এদিকে দৃষ্টি দিয়ে কৃষির আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির দাম কমাতে হবে আর কৃষকদের ফসলের দাম বাড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে ধানের দাম বাড়াতে হবে। আমরা জানি বর্তমান সরকারের আমলে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি সুখে ছিল। কিন্তু বর্তমান এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে কারা আছে বা কোনো চক্র এই বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে কিনা এটা বের করতে হবে। তা নাহলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে না। একটা জাতির একটা বৃহৎ অংশ যদি সুখে না থাকে তবে আমরাও সুখে থাকতে পারি না। আমাদের উচিত হবে কৃষকদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে সহযোগিতা করা। হয়তো বা এই লোকাসানের কারণে কত কৃষক পরিবারের সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আবার কত পরিবার না খেয়ে জীবনযাপন করছে। এ ব্যাপারে যদি আশু পদক্ষেপ না নেয়া হয় তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। আর কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ ও বাড়বে। তাই বর্তমানে এই স্থিতিশীল পরিবেশে কোনো বিষয়কেই খুব বেশি জটিল করা উচিত না। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ আমরা উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সেখানে যদি আমাদের কৃষক সমাজ অসন্তুষ্ট থাকে তাহলে উন্নত দেশের দিকে ধাবমান হওয়ার এই যাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। তাই আমাদের দেশ বাঁচানোর জন্য, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য কৃষককে তার ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। যাতে আর কোনো কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। কৃষকের কৃষির পণ্য আরও সহজলভ্য করতে হবে। মনে রাখতে হবে কৃষকই আমার দেশের সব থেকে বড় সম্পদ।