শিক্ষার্থীদের আত্মহনন: সচেতনতা জরুরি

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট
২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ৬ মে প্রকাশিত হয়েছে। ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের এই পরীক্ষায় ২১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন শিক্ষার্থী পাস করে। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫০ জন। প্রকাশিত ফলাফলে অকৃতকার্য হয়ে এ পর্যন্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার ফারজানা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর নয়াদীঘি এম রফিক আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে সাহাব উদ্দিন, টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার আথাইল শিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী জিপিএ-৫ না পাওয়ায় আসফিয়া মুন্না নিপা, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী কাশিয়াবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পার্বতী রানি, লক্ষ্ণীপুর জেলার রামগঞ্জ রাব্বানিয়া কামিল মাদ্রাসার সুরাইয়া আক্তার, বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের হেপি আক্তার, নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ইলা খানম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাকিবুল ইসলাম ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ছাড়াও কয়েকটি জেলায় অকৃতকার্য কিংবা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অকালেই ঝরে পড়া এসব তরুণ-তরুণীরা জীবনের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি বলেই আত্মহত্যার মতো একটি নিন্দনীয় পথের মাধ্যমে জীবনকে শেষ করে দিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের মাঝে জীবনের গুরুত্ব বোঝানোর দায়-দায়িত্ব আসলে কাদের ওপর বর্তায়? দশটি বছর প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়া করেছে। লেখাপড়ার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন করেছে সেটা কী মূল্যায়িত হয়েছে? পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেই কী জীবন শেষ করতে হবে? অকৃতকার্য হওয়া মানেই কী জীবনে আর চাওয়া পাওয়া নেই? দশটি বছর শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক পাঠদান করেছেন, অভিভাবকরা কষ্ট করেছেন তাদের সন্তানদের মানুষ করার জন্য- সবকিছু কী বৃথা গেল না? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এখন এসেছে। নতুন করে ভাবতে হবে কীভাবে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজ থেকে এসব তরুণদের ফেরানো যায়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও যেন আত্মহত্যার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় মৃতু্যর কাছে নিজেকে অসহায়ের মতো সপে না দেয়। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চিন্তাও যেন করতে না পারে তার জন্য এখন থেকেই ভাবতে হবে। আত্মহত্যা রুখতে সব ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান বের করতে হবে। কার্যকর সমাধানের মাধ্যমে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে পাঠ্যপুস্তকে বিশদ আলোচনা থাকতে পারে। তরুণদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। পৃথিবীতে এমন অনেক মনীষী আছেন যারা প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও স্বীয় প্রচেষ্টায় জীবনের সাফল্যের উচ্চ সিঁড়িতে পৌঁছেছেন। ব্যক্তি জীবনে তারা সফলতা অর্জন করে আজ পৃথিবীর সবার কাছে জনপ্রিয়। শুধু মনীষী কেন অনেক লেখক, রাজনীতিবিদ, শিল্পী আছেন যারা পরীক্ষায় সফলতা পাননি কিন্তু জীবন যুদ্ধে সফলতা পেয়ে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। সফল উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, লেখক, বিজ্ঞানী- সবাইকেই ব্যর্থতার কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে সফল হতে হয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, চীনের ব্যবসায়ী আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা, বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এরা কেউই একদিনে নামকরা ব্যক্তিতে পরিণত হননি। ব্যর্থতার ঘাত প্রতিঘাতের পর সফলতার আলোর মুখে দেখেছেন। পৃথিবীজুড়ে আজ তাদের সফলতার গল্প। এসব সফল ব্যক্তিদের গল্পও তরুণ শিক্ষার্থীদের শোনাতে হবে। পারিবারিকভাবে তথা সবার কাছেই যেন একজন শিক্ষার্থী জীবনের মমত্ববোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। তার জন্য আমাদের সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। কোনো তরুণকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারি না। দেশের এক বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জীবনের যথার্থতা সম্পর্কে আরো সচেতনতা তৈরি করার দায়িত্ব আমাদের সবার। তাদের ভেতর জীবনের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। আমাদের চারপাশের আর কাউকেই যেন আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনকে ধ্বংস করতে না হয়। পরিশেষে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ উইনস্টন চার্চিল এর ভাষায় বলতে হয়- 'ব্যর্থতা মানেই সব শেষ নয়; ব্যর্থতার পরও এগিয়ে যাওয়ার সাহস রাখতে হবে।' চার্চিলও ব্যক্তি জীবনে অনেক ব্যর্থতার পর সফলতা অর্জন করেছেন। সফল ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করে শিক্ষার্থীরা তারা জীবন সম্পর্কে আরো সচেতন হবে। তরুণরাই আগামীর পৃথিবীটা গড়বে- এমন প্রত্যাশা আমাদের সবার।