বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়

টাইগারদের অভিনন্দন

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কয়েকদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ডে শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজন 'বিশ্বকাপ ক্রিকেট'। বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের ম্যালাহাইডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শুক্রবার বৃষ্টিবিঘ্নিত শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিসকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টাইগার বাহিনী ঐতিহাসিক জয় তুলে নিল। ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ। আর এই জয়ের মধ্যদিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে আরও উচ্চতায় উঠে গেল মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় এই সিরিজ নানান কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, একটি শিরোপা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একধাপ এগিয়ে দেবে। অধিনায়কের কথাটিই শেষ পর্যন্ত সত্য বলে প্রতীয়মান হলো। এর আগে ছয়বার ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। কয়েকবারই হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে শিরোপা। অবশেষ কাঙ্ক্ষিত জয় ধরা দিল। সপ্তম অভিযানে ফাইনাল দুঃস্বপ্ন ঘোচাল বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ডাকওয়ার্থ-লুইস (ডি/এল) পদ্ধতিতে ২৪ ওভারে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ২১০ রান। শুরুতে সৌম্য সরকার এবং শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেন ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলে শাপমোচন করলেন অধরা শিরোপার। সাত বল হাতে রেখেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল টিম টাইগার্স। এটা প্রথমবারের মতো কোনো পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে শিরোপা জেতা। ডাবলিনের ফাইনাল তাই সত্যিকার অর্থেই 'লাকি সেভেন' হয়ে থাকল বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ দল টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানায়। ক্যারিবীয় দুই ওপেনার শাই হোপ ও সুনীল অ্যামব্রিস দারুণ সূচনা করেন। বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ২০.১ ওভারে ১৩১ রান জনা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরে। ওপেনার দুজনই পান ফিফটির দেখা। বৃষ্টির পর আবারও খেলা শুরু হলে ২৪ ওভারে ম্যাচ নামিয়ে আনা হয়। নির্ধারিত ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৫২ রান তোলে ক্যারিবীয়রা। তবে 'বৃষ্টির আইনে' বাংলাদেশের সামনে নতুন টার্গেট দাঁড়ায় ২৪ ওভারে ২১০ রান। বৃষ্টির কারণে খেলা পরিত্যক্ত হলেও ফাইনালে জয়ী হতো বাংলাদেশ। তবে 'ফাইনাল' ম্যাচের 'মর্যাদা' রক্ষায় হাল ছাড়েননি ম্যাচ অফিসিয়াল ও দুই দলের ক্রিকেটাররা। দফায় দফায় হানা দেয়া বৃষ্টি থেমেছে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর। এ কারণে ম্যাচ গড়ায় কার্টেল ওভারে। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দলের ওপেনার সৌম্য সরকার খেলেন এক ঝড়ো ইনিংস। দলীয় ৬০ রানের মধ্যে ওপেনার তামিম ইকবাল (১৮) এবং ওয়ান ডাউনে নামা সাব্বির রহমানকে (০) হারানোর পর আরও কঠিন হয়ে যায় সৌম্যর কাজ। তবে মারকুটে ভঙ্গিতে ব্যাট চালাতে থাকা সৌম্য দলের রানের গতি কমতে দেননি। তৃতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ৪৯ রানের জুটি। ৯টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৪১ বলে ৬৬ রান করা সৌম্য বিদায় নেয়ার খানিক পর মুশফিকও সাজঘরে ফেরেন, ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ৩৬ রান করে। দুজনের বিদায়ের পর সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ মিঠুনও। এরপর দল চাপে পড়ে গেলেও সেই চাপ জয় করেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন। শেষপর্যন্ত তারা দুজনই নিশ্চিত করেন দলের প্রথম ফাইনাল জয়। মোসাদ্দেক ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন ২টি ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ২৪ বলে। ৭ বল হাতে রেখেই ২১০ রানের টার্গেট টপকে যায় টাইগাররা। আর বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করল টাইগারদের বদলে যাওয়া ক্রিকেট নৈপুণ্য। সর্বোপরি বলতে চাই, সরকার যেমন ক্রিকেটের প্রতি যত্নশীল, তেমনি ভাবে ক্রিকেটাররাও তাদের সেরাটুকু উপহার দিয়ে দেশকে উচ্চতায় তুলে ধরছেন। ডাবলিনেও এর প্রমাণ মিলল। প্রত্যাশা থাকবে, আগামী দিনগুলোতেও টিম টাইগার্স জয়ের এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে সচেষ্ট থাকবেন। অনবদ্য ব্যাটিংয়ের জন্য ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ দল যে নতুন দিনের আগমনী বার্তা জানিয়ে দিল, তা বলা বোধ করি অতু্যক্তি হয় না। সবশেষে বিশ্বমঞ্চে ইতিহাস গড়ে দেশবাসীকে এমন একটি সম্মানজনক জয় উপহার দেয়ায় টাইগার বাহিনী এবং ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমরা অভিনন্দন জানাই।