৫ পাচারকারী আটক

দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে

প্রকাশ | ২০ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বৈশ্বিক একটি সমস্যার নাম মানব পাচার। গরিব দেশগুলোই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বেশ কয়েকদিন ধরেই মানব পাচারের বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ৩৯ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় অবৈধ উপায়ে এবং পথে বিদেশে মানব পাচার নিয়ে খোদ প্রশাসনের মধ্যেও অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। দেশে এবং বিদেশে পাচারকারী শনাক্তের বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় ৮৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও পুলিশ। এ সময় মানব পাচারকারী দলের পাঁচজনকে আটক করা হয়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ সৈকত এলাকা ও পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া করিমদাদ মিয়াঘাট থেকে শুক্রবার মধ্যরাতে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার ও পাচারকারীদের আটক করা হয়। পরিতাপের হলেও সত্য যে, অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার পথে প্রায়ই প্রতারণা এবং বিয়োগান্ত ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মানব পাচারের মতো জঘন্য কর্মকান্ড না থামাও বিষয়টি দেশের জন্য অত্যন্ত শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতির অবসানই প্রত্যাশিত। এক সময় এ দেশের শত শত শিশু পাচারের শিকার হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় জকি হতে বাধ্য হতো। উটের দৌড় প্রতিযোগিতার আতঙ্কে এসব শিশুর অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপে কর্মসংস্থানের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন জাহাজ বা নৌকাডুবিতে। এ পর্যন্ত ইউরোপে মানব পাচারের সময় নৌকা বা জাহাজডুবিতে যারা মারা গেছেন তার সিংহভাগ বাংলাদেশি। মালয়েশিয়ায় চাকরির আশায় অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে কত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তার হিসাব নেই। পাচারকারীদের কবলে পড়ে থাইল্যান্ডের গহীন জঙ্গলে পণবন্দি হয়ে জীবনদান কিংবা ক্রীতদাসের জীবন বরণ করার ঘটনাও কম নয়। এ ছাড়া বিদেশে চাকরি দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও, চাকরি না দিয়ে প্রতারণা শুধু নয়, জীবন কেড়ে নেয়ার ঘটনাও অনেক ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ায় এদেরও নানাভাবে পাচারের কৌশল বেছে নিয়েছে প্রতারক চক্র। বিষয়টির সঙ্গে দেশের সম্মানের প্রশ্নও জড়িত। বিধায় পাচারকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে যেতে হয় দেশ থেকে দেশান্তরে, দূর থেকে দূরান্তে। কিন্তু এই যাত্রাপথ খুব মসৃণ নয়। নানা কায়দায়, নানারূপে বিভিন্ন প্রকরণ ও ছদ্মাবরণে মানব পাচার হয়েই চলেছে এবং তা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিব্যাপ্ত। এমনটা হচ্ছে মূলত কর্মসংস্থানের অভাব বা বেকার সমস্যা থেকেই। জীবিকার জন্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বাইরে যেতে চায়। এই যে মানুষ পাচার হয়ে যাচ্ছে অজানার পথে, অচেনা জগতে, ভাগ্য তাদের পরিণত হচ্ছে দুর্ভাগ্যে। মানব পাচারকারীদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এখন বাংলাদেশের কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জনগোষ্ঠী। মালয়েশিয়া পাচারকালে তাদের আটক হওয়ার বিষয়টি থেকেও তা স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, পাচারকালে ৮৪ রোহিঙ্গা উদ্ধারের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও পুলিশ ৫ দালালকে আটক করেছে। আমরা মনে করি, দালালের পাশাপাশি চক্রের মূল হোতাদের আটকেও প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। পাচারকারী রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে তা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। আমরা জানি, এর আগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে মানব পাচারের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে উলেস্নখ করেছে। বিষয়টিকে আমলে নিয়েই সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো। সর্বোপরি বলতে চাই, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা উত্তম। যেহেতু জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে, সচ্ছল জীবনযাপনের লক্ষ্যে মানুষকে দেশান্তরী হতে হচ্ছে, সেহেতু তাদের গমনাগমন যাতে নিরাপদ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। মানব পাচারের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মানব পাচার আইনকে কার্যকর করাও অপরিহার্য। সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আরও কঠোর হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।