ডেঙ্গু পরিস্থিতি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক- এই আলোচনা বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। ফলে, সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃতু্যর মিছিল। অন্যদিকে লক্ষণীয়, এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তথ্য মতে, ডেঙ্গুর 'হটস্পট' হয়ে ওঠা এই এলাকায় ডেঙ্গুতে মৃতু্যর সংখ্যা সারাদেশে এই রোগে আক্রান্ত মোট মৃতু্যর প্রায় অর্ধেক। যা স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডিএসসিসিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আমরা বলতে চাই, যখন জানা যাচ্ছে- সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবং ডেঙ্গুর 'হটস্পট' হয়ে ওঠা এই এলাকায় ডেঙ্গুতে মৃতু্যর সংখ্যা সারাদেশে এই রোগে আক্রান্ত মোট মৃতু্যর প্রায় অর্ধেক; তখন এটি এড়ানোর সুযোগ নেই। সারাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি এই এলাকায় কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মৃতু্যর সংখ্যা ১৩৫ জন। একই সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মারা গেছে ৪৮ জন। যা ডিএসসিসির তুলনায় প্রায় তিন গুণ কম। এই দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ ছাড়া বরিশালে ৩৩ জন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে একজন, সিটি করপোরেশনের বাইরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ২৬ জন, খুলনায় ১৭ জন, ময়মনসিংহে তিনজন, রাজশাহীতে একজন এবং রংপুরে একজন ডেঙ্গুতে মারা গেছে।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে- একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, পুরো রাজধানীই এখন ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে। আর এডিস মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বিবেচনায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন- মুগদা, মান্ডা, যাত্রাবাড়ী, দোলাইপাড় ও দনিয়া। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। ফলে, এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। আমলে নেওয়া দরকার, এই আলোচনাও সামনে এসেছে যে, পরিস্থিতির অবনতি হলেও এবারের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় বড় দুর্বলতা হচ্ছে, প্রতিবার বর্ষা মৌসুমে এডিসের জরিপ করলেও এবার তা করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এমনকি বর্ষাপূর্ব জরিপেরও তেমন ইঙ্গিত মিলছে না। যা রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন আইইডিসিআরের একজন উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন। ফলে, এই দিকগুলোকে সামনে রেখে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। ডেঙ্গু সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। আক্রান্ত ও মৃতু্য এসব তথ্য আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। এডিসবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এছাড়া, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি পায় সেখানে যেমন ধ্বংস করা দরকার, এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও কার্যকর উদ্যোগও জরুরি। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিন। সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া ডেঙ্গু রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নেরও কোনো বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেভাবে ডেঙ্গু আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে তা আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পিত উদ্যোগ অপরিহার্য। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।