পাঠক মত
পরিবেশ সুরক্ষা জরুরি
প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নীলকণ্ঠ আইচ মজুমদার ময়মনসিংহ
পরিবেশ শব্দটির সঙ্গে আমরা ছোটকাল থেকেই বেশ পরিচিত। বই থেকে হোক কিংবা মানুষের মুখ থেকেই হোক। শব্দটি যেমন পরিচিত তেমনি অপরিহার্য। বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ সুন্দর হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে ততই পরিবেশ মানুষের বেঁচে থাকার প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। এই যে চলে যাওয়া তার বেশিরভাগের জন্যই দায়ী মানবসভ্যতার খামখেয়ালিপনা। প্রতিবছর এদিন সারা পৃথিবীতে জনসাধারণের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। জানা যায়, ১৯৬৮ সালে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে উদ্বেগের কথা জানিয়ে সুইডেন সরকার জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি পাঠায় এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার ফলস্বরূপ ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ৫ থেকে ১৬ জুন মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়। সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুন পরিবেশ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে প্রথম এ দিবসটি পালিত হয় সারাবিশ্বে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিকমতো বজায় রেখে মানুষ যাতে এই পৃথিবীর বুকে অন্য জীবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে এক সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্য। পরিবেশ দিবসের আলোচনা করতে গেলেই প্রথমে আসে পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিনদিন এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে মানবসভ্যতা টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশ জনবহুল এবং আর্থিক সংকটে রয়েছে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। আলোচনা করা প্রয়োজন দূষণের কারণগুলো কী কী? বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ হতে পারে। একেক দেশে দূষণের কারণগুলো একেক রকমের হতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে যানবাহনের কালো ধোঁয়া ইটের ভাটা এবং রাস্তার ধুলোবালি পরিবশেকে অধিক দূষণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন বাড়ছে এবং শিল্পায়নের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন কলকারখানা। অধিক পরিমাণে শিল্পায়ন যেমন প্রয়োজন তেমনি এ শিল্পায়ন থেকে যে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে তা থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি। যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এসব যারবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন শব্দদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি করছে। যার ফলে শ্রবণশক্তি কমে আসছে পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে জটিল আকার ধারণ করেছে পানিদূষণ। ক্ষতিকর শিল্প বর্জ্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে নদীতে মিশে যাচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে নদনদীর পানি দূষিত হচ্ছে এ ছাড়া ভালো এবং উন্নত ফসল ফলানোর জন্য জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার কীটনাশক প্রয়োগ করছে কৃষক। প্রয়োগের ফলে এসব রাসায়নিক সার পানিতে মিশে গিয়ে পানিদূষণ হচ্ছে দ্রম্নত। একদিকে পানি দূষিত অন্যদিকে অধিক ফসল ফলানোর চ্যালেঞ্জ। দুটোর মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আর বিপদে পড়ে এসব পানি যারা ব্যবহার করছেন তারা বিভিন্ন রকমের রোগে ভুগছেন। এর ফলে প্রাণিকুল এবং পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা জানি দেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে দেশের বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে এবং সরকারি পর্যায়েও বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। এছাড়া সংরক্ষিত বনের গাছ যেমন রাতের আধারে উজাড় হচ্ছে অন্যদিকে শিল্পায়ন হচ্ছে বনাঞ্চলে। এছাড়া বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম পরিচিত ব্যবহার্য জিনিসের মধ্যে রয়েছে পস্নাস্টিক। এ দ্রব্যটির ব্যবহার দিনদিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পস্নাস্টিক পচনশীল না হওয়াতে মাটির জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এটি পোড়ানোর সময়ও উৎপন্ন হয় হাইড্রোজেন যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর ব্যবহার প্রথমে সীমিত করে পরবর্তীতে পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে পলিথিন সবচেয়ে ভয়াবহ বর্জ্য। এ বর্জ্যের কোনো শেষ নেই। তাই পলিথিন বন্ধ করে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি করা জরুরি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বেশি মাত্রায় যেটি লক্ষ্য করা যায় তা হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। গ্রিন হাউস নির্গমনের ফলে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিাত ওজোন স্তর ছিদ্র হয়ে সূর্যের আর্ক তেজস্ক্রিয় বেগুনি রশ্মি পৃথিবীর পৃষ্ঠে বিনাবাধায় পতিত হচ্ছে এবং ধূলি, কার্বন ও অন্য গ্যাসীয় পদার্থের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে অধিক তাপ আটকা পড়ছে যার ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দুই মেরু ও হিমালয় পর্বতশৃঙ্গে জমাট বাঁধা বরফ গলতে শুরু করেছে। এতে পরিবেশের বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে পড়েছে। যতদিন দিন যাচ্ছে ততই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পৃথিবী বিশেষ করে আমাদের মতো জনবহুল এবং অনুন্নত দেশগুলোর ওপর প্রভাব পড়ছে সবচেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলো এ বিষয়ে বারবার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নত বিশ্ব অধিক শিল্পায়ন ঘটাচ্ছে তার প্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর। যার প্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে দ্রম্নত। প্রাণিকুল আজ হুমকির সম্মুখীন। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এ সমস্যা এককভাবে কোনো দেশের নয়- এ সমস্যা সমগ্র বিশ্বের। কারও বেশি কারও কম। তাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের যে অঙ্গীর আমরা করে থাকি বা ইতোপূর্বে আমরা করেছি তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। অঙ্গীকার শুধু কাগজেপত্রে নয় এর বাস্তবায়ন হতে হবে মাঠে।
নীলকণ্ঠ আইচ মজুমদার
ময়মনসিংহ