লঞ্চ জোড়াতালির মহাযজ্ঞ

এ প্রবণতা রোধ হওয়া জরুরি

প্রকাশ | ২১ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতি বছর ঈদ বা অন্য কোনো উৎসব উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকলে সড়ক-মহাসড়ক এবং নৌপথেও মর্মান্তিক সব দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। আর এসব দুর্ঘটনার নেপথ্যে মূল কারণ হিসেবে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক, চালকের বেপরোয়া মনোবৃত্তি, অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং সড়ক মহাসড়কের নানান অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি বছরই ঈদ উপলক্ষে ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহনে রং করে সড়কে নামানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে এবারও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মহাসমারোহে শুরু হয়েছে ভাঙা আর মরিচা ধরা লঞ্চের মেরামতের কাজ। বলার অপেক্ষা রাখে না জোড়াতালি দেয়া ফিটনেসহীন এসব লঞ্চের কারণে নিরাপত্তাহীনতা বহুগুণ বেড়ে যাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন থেকেই সংশ্লিষ্টরা কঠোর না হলে বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়েই দেখা দেবে। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে মানুষ। নদী পারাপারের মাধ্যম লঞ্চ। এ সুযোগে মেরামত ও রং করে নামানো হচ্ছে অনেক পুরনো লঞ্চ। নদী পারাপারের মাধ্যম যেহেতু লঞ্চ, তাই সাধারণ যাত্রীরাও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা না করেই প্রতিবারের মতো এবারও এসব লঞ্চেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হবেন। সবমিলিয়ে এ বছরও নৌপথ ঝুঁকিমুক্ত হতে পারছে না। বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা চরকালীগঞ্জ ও চরমিরেরবাগ এলাকার ডকইয়ার্ড, সদরঘাট এলাকার ১০টি ডকইয়ার্ড ও গ্যারেজ, কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মিরেরবাগ পর্যন্ত ৩৭টির মতো ডকইয়ার্ডেরও একই দৃশ্য। কোথাও পুরনো লঞ্চে রং লাগানো ও মেরামতের কাজ চলছে, কোথাও ফিটনেসহীন লঞ্চগুলোতে জোড়া দেয়া হচ্ছে লঞ্চের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন অংশ। মেঝে কিংবা কার্নিশে লাগানো হচ্ছে লোহার পাত। ইন্টেরিয়র ডিজাইনেও পরিবর্তন করা হচ্ছে। এমনকি বুড়িগঙ্গার পাড়ে কেরানীগঞ্জের তেলঘাট ও কেরোসিনপট্টি অংশের ইয়ার্ডে লঞ্চের নিচের অংশও মেরামত করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। ডকইয়ার্ডে লঞ্চ মেরামতের সঙ্গে যুক্তরা জানিয়েছেন, ঈদের আগে ফিটনেস লাইসেন্স নিতে ত্রম্নটিপূর্ণ লঞ্চগুলো নামমাত্র সংস্কার করা হয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, এ রকম লক্কড়-ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন লঞ্চের সংখ্যা হবে শতাধিক। বিআইডবিস্নউটিএ কর্তৃপক্ষের মতে, নদীতে চলাচলকারী শতকরা ৫০ ভাগ লঞ্চেরই কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এরপরও যদি পুরাতন লঞ্চ জোড়াতালি কিংবা রং করে যাত্রীবহনের কাজে নামানো হয়, তাহলে বিষয়টি কতটুকু আতঙ্কের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও এ ব্যাপারে কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। ডকইয়ার্ডগুলো নদীদূষণ করছে বলে পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করলেও ২০০৭ সালের ফেব্রম্নয়ারির পর কোনো ডকইয়ার্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে এমন তথ্যও নেই। স্মর্তব্য যে, লঞ্চ মালিকরা বছরের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হিসেবে দুই ঈদকে গণ্য করে থাকেন। তাই প্রতিটি ঈদের আগে লঞ্চের ফিটনেস নিশ্চিত করতে মেরামত জরুরি হয়ে পড়ে। অথচ এসব দেখভালের জন্য সরকারের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিস্নউটিএ) রয়েছে। কর্তৃপক্ষ কেন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ডকইয়ার্ডগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না- সে প্রশ্নও করা যেতে পারে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ নদীতে নামতে দেয়া হবে না। ঈদের আগেই মোবাইল কোর্ট থাকবে।র্ যাব, পুলিশ, আনসারসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকবে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনো লঞ্চ যাতে চলতে না পারে এ জন্য কঠোর নজরদারি থাকবে। সংশ্লিষ্টদের এমন উদ্যোগ অবশ্যই আশা জাগানিয়া। কিন্তু ফিটনেসবিহীন লঞ্চকে জোড়াতালি দেয়ার সুযোগ দেয়া এবং এ ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা অত্যন্ত পরিতাপের বলেই প্রতীয়মান হয়। সর্বোপরি বলতে চাই, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না। আমরাও বারবার বলে আসছি, যাত্রীদের নিরাপদে ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আর এর ব্যত্যয় ঘটলে কিংবা সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলে তা দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারে না। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়িত্বে কঠোর হলে ঘরে ফেরা মানুষ নিরাপদেই ঘরে ফিরতে পারবেন। ঈদে যাত্রীদের গমনাগমন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নিক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।