রিজার্ভ পরিস্থিতি উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
রিজার্ভে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটলে তা যেমন সুখকর তেমনি সার্বিকভাবে আশাব্যঞ্জক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে- যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করছে। তথ্য মতে, গত তিন মাসে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় উভয়ই বেড়েছে এবং এর ফলশ্রম্নতিতে বৈদেশিক রিজার্ভ আবারো ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে আমদানি পণ্যের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিল বাবদ ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে (বিপিএম৬)। একই সময় বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার এমনটি জানা গেছে। আমলে নেওয়া দরকার, বিগত সরকারের সময় দুবার ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার যোগ হতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে রিজার্ভ আবার ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। আকুর দায় পরিশোধের পর আবারও কমেছে। রিজার্ভ ওঠানামা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, রিজার্ভ চলমান একটি বিষয়। একবার কমবে, আবার বাড়বে। তবে, এখন প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ইতিবাচক আছে, সাময়িকভাবে কমলেও আবার বাড়বে রিজার্ভ।
আমরা বলতে চাই, যখন এটা আলোচনায় আসছে যে, বর্তমানে রিজার্ভে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তখন তা আশাব্যঞ্জক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন এবং তারা সেই প্রতিশ্রম্নতি রেখেছেন। এর ফলে, প্রতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়ও বেড়েছে- যার ফলে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি এবং অযৌক্তিক আমদানি বন্ধ হওয়ার ফলে অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি থেকেও ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে- যা আরো সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
উলেস্নখ্য, অক্টোবর মাসে দেশের রপ্তানি আয় ২০.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে- যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় অনেক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি আয় বেড়ে ১৫.৭৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে- যা গত বছর ছিল ১৪.২৪ বিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে বড় অবদান এসেছে পোশাক খাত থেকে যেখানে আয় বেড়ে ১২.৮১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। অক্টোবর মাসে পোশাক খাত ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে- যা গত বছরের তুলনায় ২২.৮০ শতাংশ বেশি। এছাড়া, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ইতিবাচক বিষয় জানা যাচ্ছে। গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সময় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তবে নতুন সরকার গঠনের পর প্রবাসী বাংলাদেশিরা আবারো বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেন। ফলে, আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স বেড়ে ২২২ কোটি ডলারে (২.২২ বিলিয়ন) পৌঁছায়, সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার- (২.৪০ বিলিয়ন) যা চার বছরের মধ্যে একক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল। অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স আবারো ২৪০ কোটি ডলার (২.৪০ বিলিয়ন) আসে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী হচ্ছে- যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। স্মর্তব্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে- বাজারে 'স্থিতিশীলতা' আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রির করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নানা কারণে রিজার্ভ কমে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। অথচ মনে রাখা দরকার, রিজার্ভ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। যখন এটা জানা যাচ্ছে যে, বর্তমানে রিজার্ভে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তখন এটি আশাব্যঞ্জক। ফলে, রিজার্ভ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।