৫ হাজার বাংলাদেশি অবরুদ্ধ

নিরাপদ প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও এর প্রবাসী শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল, যা বিশেষ মনোযোগের দাবিদার। কিন্তু প্রবাসে গিয়ে শ্রমিকরা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে। সম্প্রতি জানা গেছে, লিবিয়ায় প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতির জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিষয়টিকে দায়ী করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে যে, ইতোমধ্যে ৬ জন বাংলাদেশিকে অপহরণ করার পাশাপাশি ৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। অপহৃত বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য উচ্চহারে মুক্তিপণও চাওয়া হচ্ছে। ফলে বিদ্যমান এ পরিস্থিতি লিবিয়ায় কাজের উদ্দেশে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুলাংশে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। বিপুল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই প্রবাসে কাজের উদ্দেশে পাড়ি জমান এদেশের নাগরিক। মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক কর্মরত। ফলে বিদেশে তাদের অভিবাসন যাতে নিরাপদ হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হওয়া দরকার সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। আগের চেয়ে প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, আমেরিকা ও কানাডার নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তারা নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশে বসবাসকারী আত্মীয় ও পরিবার-পরিজনদের সাহায্য-সহযোগিতা বাবদ অর্থ প্রেরণ করছেন। বিষয়টি আমাদের অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও যখন জানা যাচ্ছে লিবিয়ায় প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তখন বিষয়টি নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো সম্মিলিতভাবেই মোকাবেলা করার উদ্যোগ নিতে হবে। জানা গেছে, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার জন্য সেইফ হাউস খোলায় লিবিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাস ইতোমধ্যে সরকারের কাছে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের ঘিরে যে কোনো পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। মনে রাখা দরকার, প্রবাসী শ্রমিকরা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তারা যখন কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে, তখন তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে বিদেশে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিবাসী কল্যাণ এবং বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোয় কর্মরত প্রতিনিধিদের এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এমনিতেই বিশ্বের নানা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা স্বস্তিকর নয় বলে জানা যাচ্ছে। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। তদুপরি আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক, অভিবাসন পরিস্থিতিসহ আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই নাজুক। সুতরাং নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোর বিবেচনায় রাখা অপরিহার্য। অন্যদিকে লিবিয়ায় হাজার হাজার নাগরিক বাস্তুচু্যত হয়েছেন সংঘর্ষের কারণে। সেখানে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। তেল সমৃদ্ধ এ দেশটিতে ভয়াবহ ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। অবস্থা বিবেচনায় লিবিয়ায় বিদেশি মিশনগুলো যুদ্ধের এ পরিস্থিতিতে দূতাবাসগুলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে স্থানান্তর শুরু করেছে। এতে ২০১১ সালের মতো অধিকাংশ স্থানীয় কোম্পানি বন্ধ হয়ে প্রবাসী কর্মীদের বৃহৎ একটি অংশ দীর্ঘসময়ের জন্য কর্মসংস্থান হারাতে পারেন। সে দেশে অপরাধ ও নির্যাতনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য অপহরণের শঙ্কা আরও বেশি তীব্র হচ্ছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউরোপ এবং এশিয়ার (দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও ফিলিপাইন) দেশগুলোর মিশন ইতোমধ্যে তিউনিসিয়ায় স্থানান্তরিত করেছে। শুধু আফ্রিকা গুটি কয়েক প্রতিবেশী দেশ ও এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ মিশন এই সংকেটের মধ্যেও নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ও সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের কাজ করে যাচ্ছে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে শ্রমিকদের দেশে ফেরার কথা বলা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। প্রত্যাশা করব, লিবিয়ায় সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমলে নিয়ে সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে দ্রম্নত এবং কার্যকর উদ্যোগ নেবে।