স্বর্ণ চোরাচালান

রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে স্বর্ণের চোরাচালান যেন এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কিছুতেই চোরাচালান রোধ হচ্ছে না। এমন খবরও সামনে এসেছে যে, যাদের চোরাচালান রোধ করার দায়িত্ব তাদের মধ্যেও কেউ কেউ অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে চক্রের সঙ্গে। এর আগে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এমন বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। অবাক ব্যাপার হলো শুল্ক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও জাতীয় গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এনএসআই) একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী এর সঙ্গে যুক্ত এমন খবরও এর আগে আলোচনায় এসেছিল। অথচ এমন পরিস্থিতি হলে তা কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করা। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এবার সাড়ে ছয় কেজি সোনাসহ এক যাত্রীকে আটক করেছে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেনটিভ টিম। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের একটি উড়োজাহাজে ওই যাত্রী ঢাকায় আসার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। ঢাকা কাস্টম হাউসের উপপরিচালক অথেলো চৌধুরী জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের একটি উড়োজাহাজে ঢাকা আসেন রাজিব দেওয়ান। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বোর্ডিং ব্রিজ থেকেই তাকে অনুসরণ করা হয়। গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার পর তার কাছে শুল্ক কর আরোপযোগ্য কোনো পণ্য আছে কি না, তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অস্বীকার করেন। তার দেহ তলস্নাশি করতে চাইলে তিনি পুরোপুরি অসহযোগিতা করেন, ঔদ্ধত্য আচরণ করতে থাকেন। পরে আর্চওয়ে মেশিনের মাধ্যমে তলস্নাশি করা হলে তার প্যান্টের ভেতর ধাতব পদার্থের সংকেত পাওয়া যায়। প্যান্টের বিভিন্ন জায়গায় স্কচটেপ দিয়ে আটকানো অবস্থায় ছয়টি প্যাকেট পাওয়া যায়। এই প্যাকেটগুলোর ভেতর ৬৫টি স্বর্ণের বার ছিল। প্রতিটির ওজন ১০০ গ্রাম করে। জব্দ করা সোনার ওজন সাড়ে ছয় কেজি। এর বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বলা দরকার, বাংলাদেশ যে স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চোরাচালানকারীরা তৎপর তা বিভিন্ন সময়ের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়। এর আগেও হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বর্ণের চালান যে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসছে তা বলাই বাহুল্য। আর আমলে নেয়া দরকার, কেবল প্যান্টের ভেতর নয়, কম্বলের ভেতর কিংবা বিমানের টয়লেটে, এমনকি যাত্রীর জুতায়, মানিব্যাগে, লাগেজে, হ্যাঙ্গার গেটে, বের্ডি ব্রিজ সর্বত্রই পাওয়া গেছে স্বর্ণের বার নানা সময়েই। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তলস্নাশি চালিয়ে উদ্ধার করছে স্বর্ণের বার। টহল পুলিশের তলস্নাশিতে দামি গাড়িতেও পাওয়া গেছে স্বর্ণের বার। দেশের সীমান্ত এলাকায়ও ধরা পড়ছে স্বর্ণের চোরাচালান। আমরা মনে করি এই ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর হতে হবে। কেননা, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে তা বিপজ্জনক। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের আটককৃত যাত্রীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি বলা দরকার, যারা স্বর্ণের চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তারা রাতারাতি ধনী হতে চায় এবং তারা দেশ ও জাতির শত্রম্ন। কেননা, এর ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতির দ্রম্নত অবসান হওয়া জরুরি। আমরা চাই, দেশ থেকে চোরাচালান একেবারেই বন্ধ হোক। সে জন্য সক্রিয় হতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।