গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃতু্য

দুর্ঘটনা রোধে সতর্কতা কাম্য

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আবারও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছে। বুধবার রাতে রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের ইসলাম-শরীফ মার্কেট এলাকায় ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রান্না ও যানবাহনের কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারগুলো নাগরিকদের জীবনের জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে উঠছে। নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার এবং পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট করার নিয়ম না মানায় প্রায়ই ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩২শ' পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, ওই সময় সিলিন্ডার ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। আর এ আশঙ্কা রোধে গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করা অপরিহার্য। গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত মানহীন সিলিন্ডারও নিরাপদ রান্নাঘরকে করে তুলছে বিস্ফোরণের বিপজ্জনক স্থান। বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ বলেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য মতে, চাহিদা থাকায় লিকুডিফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসার জন্য একের পর এক নতুন কোম্পানি আসছে বাজারে। কিন্তু এই ব্যবসায়ীরা নিজেদের লাভ বুঝলেও গ্রাহকের নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নেন না। অভিযোগ আছে অনেক কোম্পানিই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা করছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, হাতে গোনা দু-একটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির সেবায় গ্রাহক সন্তুষ্ট থাকলেও বাজার ধরতে বাজারে ঢুকে পড়ছে অখ্যাত বেশ কিছু কোম্পানি, যারা কোনো ধরনের মান রক্ষা না করেই নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বাজারজাত করছে। এতে একদিকে গ্রাহক যেমন ঠকছেন, তেমনি বাড়ছে ঝুঁকি। আশঙ্কার বিষয়, কিছুদিন যাবত আবাসিকে ব্যবহৃত এমন কয়েকটি নিম্নমানের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ও গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বনামধন্য দু-একটি কোম্পানি মান বজায় রেখে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করছে। বাকিরা মান রক্ষার ব্যাপারে উদাসীন। তাদের মতে, এই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের সঙ্গে যেহেতু মানুষের জীবন-মৃতু্যর বিষয়টি জড়িত, এ জন্য নিরাপত্তার খাতিরে এবং দুর্ঘটনা রোধে গ্রাহকদের অবশ্যই মানসম্মত সিলিন্ডার ব্যবহার করা উচিত। বুধবার গাজীপুর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে, রান্না করার সময় সিলিন্ডারের লিকেজ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিলিন্ডারে সাধারণত গ্যাসভাল্ব, হোসপাইপ, রেগুলেটর ইত্যাদি লিক হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে থাকে। এ জন্য সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ করে সেইফটি ক্যাপ লাগানো উচিত। এ ছাড়া নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা কর্তব্য যে সিলিন্ডার লিক হচ্ছে কিনা। এলপিজি সিলিন্ডার কেনার সময় ক্রেতাদের উচিত উৎপাদনের তারিখ দেখে নেয়া। অপরদিকে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যেসব সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা নামকাওয়াস্তে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে যথাযথ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না নিয়েই যেখানে-সেখানে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায় নামছেন তার লাগাম টেনে ধরতে কঠোর হওয়া। অভিযোগ আছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ ছাড়াই গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করেন। এ প্রবণতা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অবৈধভাবে সিলিন্ডার গ্যাস, নিম্নমানের রেগুলেটর, নিম্নমানের গ্যাস সরবরাহ পাইপের জন্য অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনাও বাড়ছে। বলাই বাহুল্য, এক একটি গ্যাস সিলিন্ডার যেন এক একটি সম্ভাব্য বোমা। নিয়মিত পরিচর্যার অভাবেই বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটছে বলে প্রতীয়মান হয়। আধুনিক সভ্যতা অনেকখানি যন্ত্রনির্ভর, কিন্তু যন্ত্রের অনেক যন্ত্রণাও থাকে; সেই যন্ত্রণা যেন প্রাণঘাতী না হয়ে ওঠে, তার জন্য যন্ত্রের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিচর্যা প্রয়োজন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করার কথা। বিস্ফোরক অধিদপ্তরে এই পরীক্ষার রিপোর্টও জমা দেয়ার কথা। আমরা মনে করি, এই বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে আইনগত ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জরুরি। আইন করে সিলিন্ডারের ফিটনেস এবং সিলিন্ডার রিটেস্ট করানো বাধ্যতামূলক করা গেলে এ ধরনের ঘটনা কিছুটা হলে কমবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার কারো জন্যই নিরাপদ হতে পারে না। সুতরাং এ বিষয়টিকে হেলাফেলা করারও সুযোগ নেই।