কৃষক বাঁচান, নাহলে দেশ বাঁচবে না

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। শস্য-শ্যামলা, সুজলা, সুফলা এ দেশের অর্থনীতি কৃষিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। গ্রামে বসবাসকারী জনগণের ৯০%-ই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। আজকের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ পাওয়া বাংলাদেশ কৃষকদেরই অবদান। কিন্তু কৃষকদের অবদানের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ রাষ্ট্রের পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন, তারা প্রায় সময়ই কৃষি এবং কৃষকদের কথা ভুলে যান। আজকের বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। দেশে যথেষ্ট পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে। কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়ন কি একই পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছে? কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়ন করার জন্য দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। অতি সম্প্রতি কৃষকদের নাজুক অবস্থার একটি নিষ্ঠুর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে এক কৃষকের ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয়া। গতকাল পাবনার এক কৃষক অভাবের কারণে সন্তানদের চাহিদাপূরণে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছে। এমন খবর একজন কৃষকের সন্তান হয়ে আমি কোনো অবস্থাতেই মানতে পারছি না। এক মণ ধান উৎপাদন করতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তার বিক্রয় মূল্য তার চেয়ে কম। কৃষকরা তাদের খরচই ওঠাতে পারছে না। আর যারা ভূমিহীন কৃষক তাদের কথা তো বর্ণনার মতো নয়। কৃষকদের যখন এমন নাজুক অবস্থা একই সময় বাজারে চালের দাম ঠিকই বেশি। পাশাপাশিই ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি অব্যাহত আছে। সরকারের পক্ষ থেকে চাল ক্রয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে ১০৪০ টাকা মণ দরে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায় এই যে, আসলেই কি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে চাল ক্রয় সম্ভব হবে? কৃষকরা তাদের নায্যমূল্য পাবে? নাকি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীরা এখানেও ছোবল দেবে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ এর আগেও নেয়া হয়েছে; কিন্তু প্রকৃত কৃষকরা এর সুফল খুব কমই পেয়েছে। আমাদের দেশের কৃষকরা অন্যান্য দেশের কৃষকদের মতো সুসংগঠিত নয়। আমাদের রাজনীতিবিদরাও কৃষকদের নিয়ে খুব বেশি ভাবেন না। দেশের মাথাপিছু আয় যথেষ্ট বেড়েছে; কিন্তু পালস্না দিয়ে বেড়ে চলছে ধনী, দরিদ্র্যের বৈষম্য। বিদেশে টাকা পাচারে বাংলাদেশ ২য়, অতিধনী বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ প্রথম এসব খবর বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় বাধা। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দ্বিগুণ বেড়েছে, বড় বড় ব্যবসায়ীরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, ঋণখেলাপিরা ঋণ মওকুফ পাচ্ছে আর হতভাগা কৃষক কি পাচ্ছে!! তার ফসলের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছে না। পাটকলগুলো ধ্বংসের দারপ্রান্তে অথচ ভারত আমাদের পাট আমদানি করে পুনঃরপ্তানি করে ঠিক লাভ করছে। অথচ আমাদের কৃষকরা পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চিনিকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনছে তারপরও চিনি আমদানি বন্ধ নেই। এসব বন্ধ না হলে চিনিকল বাঁচবে না। রাজনীতিবিদরা, ব্যবসায়ীরা তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠায় পড়াশোনা করানোর জন্য, সরকারি কর্মকর্তারাও সন্তানদের শিক্ষার পিছনে খরচ করার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা রাখেন। আর কৃষকের সন্তানদের অনেকেই ঝরে পড়ে। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় তারও অনেক কষ্টে দিন পার করে। আমি নিজে অনেককে দেখেছি যারা ১৫-২০ টাকায় এক বেলার খাবার খেয়েছে। কখনো তাও জোটেনি। টিউশনের বেতন পাওয়ার কথা বলে কতজন থেকে টাকা ধার নিয়ে দিনাতিপাত করেছে। এটাই নির্মম বাস্তবতা। তাহলে কৃষকের সন্তানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা রাষ্ট্রের জন্য অবশ্যই কর্তব্য। যারা নিজে কষ্টকে দেখেছে, ভুক্তভোগী তারাই অন্যের কষ্ট বুঝবে। এসব প্রতিভা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। আমাদের শিকড় কৃষিতেই নিহিত। সুতরাং কৃষিকে রক্ষা করতে হবে। মো. শহীদুল ইসলাম শিক্ষার্থী সলিমুলস্নাহ মুসলিম হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়