যোগাযোগে নতুন মাত্রা পেল

মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন

প্রকাশ | ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আসন্ন ঈদযাত্রা নিয়ে যখন সড়ক-মহাসড়কে নানামুখী ভোগান্তির আশঙ্কার কথা আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র; ঠিক তখনই কয়েকটি সেতু এবং উড়ালসড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য অবমুক্ত করা হলো। একই সঙ্গে উদ্বোধন করা হলো ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে 'পঞ্চগড় এক্সপ্রেস' নামের আন্তঃনগর ট্রেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শনিবার সকালে বর্তমান সরকারের কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প এবং 'পঞ্চগড় এক্সপ্রেস'-এর উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের মধ্যে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও গোমতী সেতু, কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কাড্ডা-১ এবং জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে বিমাইল সেতু। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, আমাদের উন্নয়নকাজ অব্যাহত থাকবে। সারা বাংলাদেশে একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান সব দিক থেকে মানুষের যোগাযোগটা যাতে সহজ হয়ে যায় সেই চেষ্টা করছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সরকারের এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র করিডোর। সরকার চারটি প্যাকেজের মাধ্যমে এ মহাসড়কটি উন্নয়নের জন্য ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় এই মহাসড়কে অবস্থিত ২৩টি সেতু এবং দুটি রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণ শেষে আগেই উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর শনিবার চন্দ্রা ও কোনাবাড়ি ফ্লাইওভারসহ ৫ প্রকল্প খুলে দেয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে বিপস্নব ঘটে গেল। এ সড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতও সহজ হয়ে উঠল। যে দুটি ফ্লাইওভারই চার লেনের। তথ্য মতে, কোনাবাড়ি ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ১৬৪৫ মিটার, নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১০ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা। চন্দ্রা ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ২৮৮ মিটার, নির্মাণ খরচ ৪৫ দশমিক ২১ কোটি টাকা। কড্ডা-১ সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০ মিটার, ব্যয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা। ১২১ মিটার দৈর্ঘ্যের বাইপাইল সেতুর নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৪২০ মিটার দৈর্ঘ্যের কালিয়াকৈর আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় হয় ১২ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতীর সঙ্গে দ্বিতীয় কাঁচপুর ব্রিজের কাজ শুরু করে। এই তিনটি সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে, ৮ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। জাপানের জাইকার সহযোগিতা আছে ৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। তবে এই প্রকল্পে প্রস্তাবিত ব্যয়ের তুলনায় ১ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। অর্থ সাশ্রয়ের বিষয়টিও ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। স্মর্তব্য যে, বর্তমান সরকার দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে এতটাই অগ্রাধিকার দিয়েছে যে, রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত এবং নগরবাসীর চলাচল সহজ করতে নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল। চলতি বছরের মধ্যেই মেট্রোরেলের একাংশের কাজ শেষ করা এবং চালু করার লক্ষ্যে দ্রম্নত কাজ চলছে। মেট্রোরেল প্রকল্প আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনাও আছে সরকারের। এর বাইরে সারা দেশের যোগাযোগ খাতে কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। সত্যিকার অর্থে যে কোনো দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অন্যতম শর্ত এবং মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে যাতায়াত এবং যোগাযোগব্যবস্থা। বাংলাদেশের বাস্তবতায় যাতায়াত তথা যোগাযোগব্যবস্থা বিশেষ উন্নতির কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের যে কোনো উন্নত এবং আধুনিক দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের যাতায়াত এবং যোগাযোগব্যবস্থাকে তুলনা করা চলে। বাংলাদেশ যতগুলো বিষয়ে বিশ্বে আলোচিত এবং আলোকিত দেশ হিসেবে নিজেকে পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত করেছে তার মধ্যেও অন্যতম বিশ্বমানের যোগাযোগব্যবস্থা। এ ছাড়া বহুল আলোচিত 'পদ্মা সেতু'ও এখন বাস্তবের মুখোমুখি। আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশের সড়ক এবং মহাসড়কগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সড়ক পথের পাশাপাশি রেল এবং নৌপথেও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে 'পঞ্চগড় এক্সপ্রেস' নামের আন্তঃনগর ট্রেন চালু হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগও বৃদ্ধি পেল। যতই দিন যাচ্ছে ততই দেশের যাতায়াতব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে সরকার। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, শুধু যোগাযোগই নয়, দেশের প্রতিটি খাতের উন্নয়ন অক্ষুণ্ন রাখতে সরকার আরও আন্তরিক হবে।