যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

৫ কোটি লোক থাইরয়েডে আক্রান্ত

প্রকাশ | ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। স্বাভাবিকভাবেই বিপুল জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। এমতাবস্থায় যদি বিভিন্ন ধরনের ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে তবে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি জানা গেল, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ বিভিন্ন ধরনের থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত। সে হিসাবে, দেশের ৫ কোটি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছে। আরো পরিতাপের বিষয় হলো, আক্রান্তদের মধ্যে ৩ কোটি মানুষই এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানেন না ও তাদের বেশিরভাগই গ্রামে বসবাস করেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, একদিকে ৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত, অন্যদিকে ৩ কোটি মানুষ জানেই না তারা আক্রান্ত- এই বিষয়টিকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিপুলসংখ্যক মানুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পরও নীতি-নির্ধারক, চিকিৎসা সেবাদানকারী ও চিকিৎসা গ্রহণকারী সবার মধ্যেই রোগগুলো সম্পর্কে সচেতনতা, উদ্যোগ ও পদক্ষেপের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এমনটি বিষয় সামনে এসেছে। আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা। কেননা, বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার আগেই এটি প্রতিরোধ সম্ভব। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, শনিবার বিশ্ব থাইরয়েড দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে আয়োজিত সচেতনতামূলক সভায় থাইরয়েড নিয়ে বলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বাংলাদেশকে আয়রন ঘাটতির অঞ্চল উলেস্নখ করে বিশেষজ্ঞরা এমনটিও বলেছেন যে, এ ভূখন্ডে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ঘাটতি থাকার পরও মাত্র ১৫০ জন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট রয়েছেন। অথচ আয়রন ঘাটতির ফলে থাইরয়েড সমস্যার মতো মারাত্মক সব রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। এ সম্পর্কে জনগণ খুব বেশি জানেও না। আর এ কারণে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের তালিকায় দ্রম্নত থাইরয়েড সম্পর্কিত রোগগুলোকে সংযুক্ত করা ও উন্নতমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠার দাবির বিষয় সামনে এসেছে- যা আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। লক্ষণীয়, চিকিৎসকরাও বলেছেন যে, বর্তমানে দেশের মানুষের শরীরে অতিরিক্ত অ্যান্টিবডির সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এটা ক্ষতিকর। আর থাইরয়েডজনিত সমস্যা বিশ্বের এক নম্বর রোগ। ফলে এ রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই মুখ্য। আমরা বলতে চাই, চিকিৎসকদের এই ভাষ্য আমলে নিয়ে এটাই স্পষ্ট হয় যে, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। থাইরয়েডে আক্রান্ত হবে কিন্তু আক্রান্তরা জানবেই না- এমন পরিস্থিতি পরিতাপের জন্ম দেয়। সঙ্গত কারণেই সচেতনতা সৃষ্টি এবং করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ে ও গর্ভধারণের আগে নারীদের অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা ও এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিত। নাহলে, বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত এমনটিও জানা যাচ্ছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশে থাইরয়েড রোগের পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন বিষয়ও সামনে আসছে যে, বাংলাদেশে সবধরনের থাইরয়েড সমস্যা একসঙ্গে হিসাব করলে, তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। এ ছাড়া ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলেই জানা যায়। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বিশেষজ্ঞদের মত আমলে নিয়ে এই রোগ নিরাময়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।