বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়
প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ইসকনপন্থি সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সোমবার দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া, কিছু ভিডিওতে দেখা যায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। লক্ষণীয়, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। এ সময় বাইরে থাকা উগ্রবাদীরা হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে ও তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইন বোর্ড ভাঙচুর করে তারা।
আমরা বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যের সম্পর্ক এ দেশের। ফলে, এই ধরনের ঘটনা কতটা উদ্বেগের সেটি আমলে নিতে হবে এবং এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশটির সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। যদিও তথ্য মতে, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ভাঙার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক ও কনসু্যলার সম্পত্তি হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
উলেস্নখ্য, ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২ ডিসেম্বর ভোরে আগরতলার হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। এছাড়া, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে, বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এ সময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি প্যাটার্নে এসেছে, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় একই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছিল। আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনের ওপর এমন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপেস্নামেটিক রিলেশন-১৯৬১ লঙ্ঘন হয়েছে। ফলে, আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো দেশটির সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ধরনের ঘটনা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। ফলে, এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটাও উলেস্নখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে ভারত সরকারকে উদ্যোগ নিতে বললেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ না; রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। রাজনীতিবিদরা তো সব সময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বক্তব্য দিয়ে থাকেন।'
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সার্বিক অগ্রগতি এবং উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যেতে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধত্বপূর্ণ তথা সুসম্পর্ক জরুরি। ফলে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার যে ঘটনা ঘটল এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হলে ভাতৃত্ব ও সহযোগিকতার মনোভাব জরুরি। যা সংশ্লিষ্টরা অনুধাবন করবে এবং যে কোনো ধরনের আনাকঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে উদ্যোগী হবে এমনটি কাম্য।